সাকরাইন

ঢাকাইয়াদের পৌষ সংক্রান্তির কিবা সাকরাইন ঐতিহ্যবাহী উৎসব

আরফিন সানজু
  • আপডেট : ০৪:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / 345

আগামী চৌদ্দ জানুয়ারী ২০২৩ইং পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িদের দখলে। আকাশ জুড়ে নানান রং আর বাহারের ঘুড়িদের সাম্যবাদ।
গত এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার বাহান্ন রাস্তা তেপান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে চলছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। রোদে সুতা শুকানোর কাজও চলছে পুরোদমে। যদিও মাঞ্জার স্থান দখল করে নিচ্ছে রক সূতা নামের এক ধরনের সূতা।

শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকালে আকাশে গোত্তা খাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটি খেলাও চলছে। অহরহ কাটা-কাটি খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাধন ছিড়ে উড়ে যাচ্ছে দূরে।চৌদ্দ জানুয়ারী পৌষ মাসের শেষ দিন।পৌষ সংক্রান্তির দিনই পালিত হয় পুরান ঢাকার এবং আদি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব। ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হবে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সকলের অংশগ্রহনে মুখরিত থাকবে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটা-কাটি খেলায় উত্তাপ ছড়াবে সাকরাইন উৎসব। এক দশক আগেও ছাদে ছাদে থাকতো মাইকের আধিপত্য।

আজ মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। উৎসবের আমেজ থাকবে পুরান ঢাকার সর্বত্র। সুত্রাপুর, শাখারীবাজার, ফরাশগঞ্জ, রায়সাহেব বাজার, কলতাবাজার, কাগজীটোলা, বানিয়ানগর, ধোলাইখাল, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া, তাঁতীবাজার, লক্ষীবাজার মাতবে ঐতিহ্যের এই উৎসবে।

আকাশে উড়বে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগাবে গান। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্ধেশ্যে ধ্বনিত হবে ভাকাট্টা লোট শব্দ যুগল।সাকারাইন উৎসব এখন আর শুধু ঢাকাইয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সাকরাইন পুরান ঢাকায় বসবাসকারী সকল মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

অতীতে সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো ছিলো অবশ্য পালনীয় অংগ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হতো আত্নীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে। নীরব প্রতিযোগিতা চলতো কার শ্বশুরবাড়ি হতে কত বড় ডালা এসেছে। আজ এই সব চমৎকার আচারগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে।

আদি ঢাকার বসবাসকারী সকল মানুষ এই ঐতিহ্যগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেন। নতুন প্রজন্মকে শোনান সেই সব মুখরিত দিনের কথা। মনের খুব গভীরে পরম মমতায় লালন করেন ঐতিহ্যের পরম্পরা। স্বপ্ন দেখেন এই সকল প্রাণময় ঐতিহ্যগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত হবে।

তাঁতী বাজার, সূত্রাপুর আর শাখারীবাজারে চলছে ঘুড়ি বানানোর শেষ সময়ের ব্যস্ততা। নাটাই কেনবার পালা শেষ। পুরান ঢাকা অপেক্ষা করছে ১৪ই জানুয়ারীর শীত সকালের। শুরু হবে উৎসব।

আর সন্ধ্যায় আধার ঘনাবার সাথে সাথে পুরান ঢাকা সকল জঞ্জাল আর কালিমা পুড়িয়ে ফেলার আর আতশবাজীর খেলায় (ইংরেজীতে যাকে বলে ফায়ার ওয়ার্কস) মাতবে। রাতে কেউ কেউ উড়াবে ফানুস। সাকরাইন এমনই সুন্দর আর অর্থপূর্ণ ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সাকরাইন

ঢাকাইয়াদের পৌষ সংক্রান্তির কিবা সাকরাইন ঐতিহ্যবাহী উৎসব

আপডেট : ০৪:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩

আগামী চৌদ্দ জানুয়ারী ২০২৩ইং পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িদের দখলে। আকাশ জুড়ে নানান রং আর বাহারের ঘুড়িদের সাম্যবাদ।
গত এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার বাহান্ন রাস্তা তেপান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে চলছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। রোদে সুতা শুকানোর কাজও চলছে পুরোদমে। যদিও মাঞ্জার স্থান দখল করে নিচ্ছে রক সূতা নামের এক ধরনের সূতা।

শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকালে আকাশে গোত্তা খাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটি খেলাও চলছে। অহরহ কাটা-কাটি খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাধন ছিড়ে উড়ে যাচ্ছে দূরে।চৌদ্দ জানুয়ারী পৌষ মাসের শেষ দিন।পৌষ সংক্রান্তির দিনই পালিত হয় পুরান ঢাকার এবং আদি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব। ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হবে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সকলের অংশগ্রহনে মুখরিত থাকবে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটা-কাটি খেলায় উত্তাপ ছড়াবে সাকরাইন উৎসব। এক দশক আগেও ছাদে ছাদে থাকতো মাইকের আধিপত্য।

আজ মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। উৎসবের আমেজ থাকবে পুরান ঢাকার সর্বত্র। সুত্রাপুর, শাখারীবাজার, ফরাশগঞ্জ, রায়সাহেব বাজার, কলতাবাজার, কাগজীটোলা, বানিয়ানগর, ধোলাইখাল, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া, তাঁতীবাজার, লক্ষীবাজার মাতবে ঐতিহ্যের এই উৎসবে।

আকাশে উড়বে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগাবে গান। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্ধেশ্যে ধ্বনিত হবে ভাকাট্টা লোট শব্দ যুগল।সাকারাইন উৎসব এখন আর শুধু ঢাকাইয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সাকরাইন পুরান ঢাকায় বসবাসকারী সকল মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

অতীতে সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো ছিলো অবশ্য পালনীয় অংগ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হতো আত্নীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে। নীরব প্রতিযোগিতা চলতো কার শ্বশুরবাড়ি হতে কত বড় ডালা এসেছে। আজ এই সব চমৎকার আচারগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে।

আদি ঢাকার বসবাসকারী সকল মানুষ এই ঐতিহ্যগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেন। নতুন প্রজন্মকে শোনান সেই সব মুখরিত দিনের কথা। মনের খুব গভীরে পরম মমতায় লালন করেন ঐতিহ্যের পরম্পরা। স্বপ্ন দেখেন এই সকল প্রাণময় ঐতিহ্যগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত হবে।

তাঁতী বাজার, সূত্রাপুর আর শাখারীবাজারে চলছে ঘুড়ি বানানোর শেষ সময়ের ব্যস্ততা। নাটাই কেনবার পালা শেষ। পুরান ঢাকা অপেক্ষা করছে ১৪ই জানুয়ারীর শীত সকালের। শুরু হবে উৎসব।

আর সন্ধ্যায় আধার ঘনাবার সাথে সাথে পুরান ঢাকা সকল জঞ্জাল আর কালিমা পুড়িয়ে ফেলার আর আতশবাজীর খেলায় (ইংরেজীতে যাকে বলে ফায়ার ওয়ার্কস) মাতবে। রাতে কেউ কেউ উড়াবে ফানুস। সাকরাইন এমনই সুন্দর আর অর্থপূর্ণ ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব।