উচ্চ তাপমাত্রার শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা, কমছে কর্মক্ষমতা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৩৬:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 173
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরগুলোয় জনসংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর শহরগুলোয় তাপমাত্রাও চরমভাবে বাড়ছে। আর এই চরম উষ্ণতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকায় ঢাকা রয়েছে সবার শীর্ষে। বুধবার বিবিসি এ খবর জানায়।

বিশ্বব্যাপী চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চরম উষ্ণতার কারণে মানুষের মধ্যে অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। চরম তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধির তালিকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে ভারতের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অব দ্যা ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ সোমবার এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ঢাকা প্রসঙ্গে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৩ সালে এই শহরে জনসংখ্যা ৪০ লাখ থাকলেও এখন দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘তাপমাত্রা বেশি হলে মানুষ খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ক্লান্ত হলে তো স্বাভাবিকভাবেই তার কাজের ক্ষমতা কমে যায়। ঢাকার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি অনেক মানুষ বসবাসের কারণে যানজটের তৈরি হয়, সেটাও মানুষের গতি ও ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।’

প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, চরম উষ্ণতার কারণে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চারভাগের একভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গবেষকরা একটি প্যাটার্ন দেখতে পেয়েছেন যে, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার শহর এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র মানুষরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে নাগরিক সুবিধার অনেক কিছু পান না।

গবেষকরা ১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর ধরে বিশ্বের ১৩ হাজার শহরে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। যেসব শহরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা থাকে, তাকেই তারা চরম তাপমাত্রা হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। এরপর অন্য শহরগুলোর বাসিন্দাদের তথ্যের সঙ্গে সেগুলো তুলনা করে দেখেছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যদিও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু অনেক শহরে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে সেখানে তাপমাত্রাও চরমভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে গত কয়েক দশকে লাখ লাখ মানুষ গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে আসায় সেখানে দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে তাপমাত্রা।

গবেষক দলের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ ইউনিভার্সিটির আর্থ ইন্সটিটিউটের গবেষক ক্যাসকেড টুহলস্কি বলেন, ‘চরম উষ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের কর্মক্ষমতার ওপর, ফলে তাদের আয়-রোজগারও কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হচ্ছে।’

চরম তাপমাত্রার কারণে ঢাকার পরেই ক্ষতির তালিকায় রয়েছে ভারতের দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহর। রয়েছে চীনের সাংহাই, গুয়াংজু, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই। এসব শহরে গত ৩২ বছরে উষ্ণতা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।

গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব ৩৭ শতাংশ, বাকি ৬৩ শতাংশের পেছনে স্থানীয় কারণ রয়েছে।

অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বলছেন, ‘এসব সমস্যার সমাধানে সবুজায়নের পাশাপাশি গাড়ি চলাচল সীমিত করতে হবে। কারণ, শহরে তাপমাত্রার পেছনে গাড়ি বা যানবাহনের বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই সঙ্গে এমন উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে মানুষ শুধুমাত্র বড় শহরমুখী না হন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

উচ্চ তাপমাত্রার শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা, কমছে কর্মক্ষমতা

আপডেট : ০১:৩৬:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরগুলোয় জনসংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর শহরগুলোয় তাপমাত্রাও চরমভাবে বাড়ছে। আর এই চরম উষ্ণতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকায় ঢাকা রয়েছে সবার শীর্ষে। বুধবার বিবিসি এ খবর জানায়।

বিশ্বব্যাপী চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চরম উষ্ণতার কারণে মানুষের মধ্যে অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। চরম তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধির তালিকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে ভারতের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অব দ্যা ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ সোমবার এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ঢাকা প্রসঙ্গে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৩ সালে এই শহরে জনসংখ্যা ৪০ লাখ থাকলেও এখন দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘তাপমাত্রা বেশি হলে মানুষ খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ক্লান্ত হলে তো স্বাভাবিকভাবেই তার কাজের ক্ষমতা কমে যায়। ঢাকার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি অনেক মানুষ বসবাসের কারণে যানজটের তৈরি হয়, সেটাও মানুষের গতি ও ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।’

প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, চরম উষ্ণতার কারণে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চারভাগের একভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গবেষকরা একটি প্যাটার্ন দেখতে পেয়েছেন যে, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার শহর এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র মানুষরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে নাগরিক সুবিধার অনেক কিছু পান না।

গবেষকরা ১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর ধরে বিশ্বের ১৩ হাজার শহরে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। যেসব শহরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা থাকে, তাকেই তারা চরম তাপমাত্রা হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। এরপর অন্য শহরগুলোর বাসিন্দাদের তথ্যের সঙ্গে সেগুলো তুলনা করে দেখেছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যদিও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু অনেক শহরে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে সেখানে তাপমাত্রাও চরমভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে গত কয়েক দশকে লাখ লাখ মানুষ গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে আসায় সেখানে দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে তাপমাত্রা।

গবেষক দলের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ ইউনিভার্সিটির আর্থ ইন্সটিটিউটের গবেষক ক্যাসকেড টুহলস্কি বলেন, ‘চরম উষ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের কর্মক্ষমতার ওপর, ফলে তাদের আয়-রোজগারও কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হচ্ছে।’

চরম তাপমাত্রার কারণে ঢাকার পরেই ক্ষতির তালিকায় রয়েছে ভারতের দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহর। রয়েছে চীনের সাংহাই, গুয়াংজু, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই। এসব শহরে গত ৩২ বছরে উষ্ণতা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।

গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব ৩৭ শতাংশ, বাকি ৬৩ শতাংশের পেছনে স্থানীয় কারণ রয়েছে।

অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বলছেন, ‘এসব সমস্যার সমাধানে সবুজায়নের পাশাপাশি গাড়ি চলাচল সীমিত করতে হবে। কারণ, শহরে তাপমাত্রার পেছনে গাড়ি বা যানবাহনের বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই সঙ্গে এমন উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে মানুষ শুধুমাত্র বড় শহরমুখী না হন।’