অকৃতজ্ঞ মাগুরাবাসী এবং একটি নৃশংস ঘটনা

ফারুক ফয়সাল
  • আপডেট : ০৪:৩২:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • / 230

ঈদুল ফিতরের ছুঁটিতে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক,নাট্যকার ও গীতিকার রোস্তম মল্লিক। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে এমন তথ্য দিয়েছে গণমাধ্যম। এ ঘটনায় সারা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক নেমে এসেছে। তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। তারা এ ক্ষেত্রে দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

সিনিয়র সাংবাদিক রোস্তম মল্লিকের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, গত ২৫-০৪-২০২৩ তারিখে সন্ধ্যা ছয়টার সময় পরিবারের সদস্যসহ মাগুরা কলেজ পাড়াস্থ (ফুড ক্যাফে) রেস্তুরায় স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংবাদিকদের ঈদ পূর্নমিলনী অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেন।

অনুষ্ঠান শেষ হলে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নেমে এলে ১০/১৫ সদস্যর একদল সন্ত্রাসী যুবক স্থানীয় ভাষায় (হায়েনা বাহিনী) যাদের বয়স ১৮-২০ বছরের মধ্যে হবে, তারা হকিস্টিক, লোহার রড ও বাঁশের লাঠিসহ আতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা চেষ্টা করে। তাদের এলোপাতাড়ি আঘাতে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। সন্ত্রাসীদের আঘাতে মাথার দুই জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হয় যেখানে সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে এবং ডান পায়ে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে।

এছাড়াও সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে বাম হাত ভেঙ্গে যায়। এ সময় তার স্ত্রী এবং মেয়ে সন্ত্রাসীদের বাঁধা দেতে আসলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে যার ফলে তার ছোট কন্যার বাম হাতের তিনটি আঙুলসহ হাতের উপরের অংশ ভেঙ্গে যায় । তার স্ত্রীর কোমরে গুরুতর জখম হয়।

সন্ত্রাসীদের আঘাতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে মৃত ভেবে তারা কলেজ পাড়ার দিকে চলে যায়। অতঃপর তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্ত রোস্তম মল্লিকের শারীরিক আবস্থার অবনতি দেখা দিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফার্ট করেন। এখন তারা ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন।

এ বিষয়ে মাগুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের সনাক্তঅন্তে সারা রাত অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, কতিপয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা ও তার ভাইদের নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কারণেই তার ওপর এই হামলা করা হয়েছে। এঘটনার সাথে স্থানীয় আরো কিছু কুচক্রি লোক জড়িত আছেন।

সাহসী সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক ৩ দশক ধরে নির্ভিক কলম চালাচ্ছেন। এরশাদ সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও তিনি দেশ ও জাতির সকল সংকট ও রাষ্ট্রের অনিয়ম -দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় এক কলম যোদ্ধা। তার লেখা সংবাদগুলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের ভীত নড়িয়ে দেয়। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মনে আতংক সৃষ্টি করে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুসখোর সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঘুম হারাম করে দেয়। ক্ষমতাসীনরাও তটস্থ থাকেন তার লিখনির ভয়ে।

তিনি ৮০‘র দশক থেকে ৯০র দশক পর্যন্ত মাগুরায় সাংবাদিকতা করেছেন। এ সময় জাতীয় পার্টি বিএনপি ও আওয়াম লীগ ক্ষমতায় ছিল। তখনও তিনি মাগুরা জেলার সেরা সাংবাদিক ছিলেন। যা দেখতেন তাই লিখতেন। প্রশাসন বা রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন মহলকে তিনি একটুও ভয় পেতেন না। যেখানে অনিংম-দুর্নীতি সেখানেই তিনি কলম চালাতেন। যেখানেই দলীয় সন্ত্রাস বা লুটপাট সেখানেই তিনি স্বোচ্ছার হতেন। এ কারণে দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা বার বার তাকে হিট করেছে।

বিএনপি সরকার আমলে তাকে সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী কলেজ ক্যাম্পাসে একবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিজ এলাকার কিছু ছাত্রদল নেতার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। সেই আমলেই তিনি সর্বহারা পার্টির সস্ত্রাস,চাদাবাজী,মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়,মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে সংবাদ লিখে জেলার মানুষকে সর্বহারা পার্টির গ্রাসমুক্ত করেন। তখন সর্বহারা পার্টির নেতারা তার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে বার বার হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু মহান আল্লøাহুতায়লা তার সহায় থাকায় তিনি আজো প্রাণে বেঁচে আছেন।

বিএনপি সরকার আমলে তিনি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা প্রকার অনিয়ম -দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রচারের কারণে তার বিরুদ্ধে ৫ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। এমনকি তাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ( ডিটেনশনে) ৪ মাস বিনা বিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়।

এসময় তার ওপর পুলিশ দ্বারা চরম শাররীক নির্যাতনও করা হয়। তখন তার গরীব পিতা বাড়ীর গাছ পালা ও গরু ছাগল বিক্রি করে অর্থ জোগাড় অন্তে মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করে রোস্তম মল্লিককে কারাগার মুক্ত করেন।

তার ক্ষুরধার লেখায় মাগুরা জেলা চরমপন্থিদল সর্বহারাপার্টি মুক্ত হয়। নতুন বাজার এলাকা থেকে পতিতালয় উচ্ছেদ হয়। ঘুস দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। এক কথায় একটি দশকধরে কেবল সাহসী লিখনীর মাধ্যমে তিনি মাগুরা জেলাকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রেখেছিলেন।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকুরী নেন বাংলাদেশের সেরা ক্রাইম ম্যাগাজিন পাক্ষিক অপরাধ জগত পত্রিকায়। এই পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করেই তিনি একটার পর একটা দু:সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। যে কারণে দ্রুত তিনি পেশাগত পদন্নোতি এবং একজন জাদরেল ক্রাইম রিপোর্টারের স্বীকৃতি পান। পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

তার ৩ দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কেবল সাহসী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বার বার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি সরকার আমলেই মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের টার্গেটে পরিণত হয়ে কাটিয়েছেন পলাতক জীবন। একবার তাকে আইসিটি আইনে ৩ টি হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে আটক করা হয়। পুলিশ ও সিআইড রিমান্ডে নিয়ে প্রান সংহারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থেকে অত্যন্ত ধর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। কিন্ত তার সাহসী কলম থেমে যায়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে এসে তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে চাকুরী করেন। দৈনিক মুক্তখবরসহ দৈনিক গণতদন্ত,দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ,দৈনিক নয়াদেশ, দৈনিক খবর বাংলাদেশ ও দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকায় রিপোর্টিং করতে গিয়ে তিনি মাগুরার একটি মাফিয়া গোষ্ঠির চুড়ান্ত টার্গেটে পড়ে যান। এই মাফিয়া গোষ্ঠিটি রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে রোস্তম মল্লিকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্ত সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক ঢাকা থেকে মাগুরায় যাওয়া কমিয়ে দিলে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছিল না। তারা ফাঁদ পেতে বসে ছিল যে, কবে সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক মাগুরা শহরে গমন করেন।

সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক কেবল সাংবাকিতাই করেন না তিনি কবিতা লেখেন,গল্প লেখেন.ছড়া লেখেন,নাটক লেখেন, উপন্যাস লেখেন,গান লেখেন, পত্রিকায় কলাম লেখেন। নাটক পরিচালনা করেন। আবার নিজে অভিনয়ও করেন। এককথায় তিনি বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। দেশে এমন প্রতিভা খুব কমই আছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে এ পর্যন্ত তার ৬খানা কবিতা,গল্প, উপন্যাস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে ১০/১২ টি নাটক প্রচার হয়েছে। এছাড়া তিনি প্রায় ২ হাজার গান লিখেছেন। কিছু গান বড় বড় অডিও কোম্পানী ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে।

এমন একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে কেন হত্যা করার চেষ্টা করা হলো? তার হিসাব মেলাতে পারছেন না মাগুরাবাসী তথা দেশবাসী। তবে মাগুরা জেলার বেশিরভাগ মানূষের অভিমত; সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক মাগুরার একজন সরকার দলীয় এমপি ও তার ভাই, মামা, তার ড্রাইভার, মামাত ভাই এবং তার ভ্যানগার্ডখ্যাত শেখ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি নিয়ে সংবাদ লেখায় কেন্দ্রীয় নেতারা ওই কমিটির অনুমোদন আটকে দেন। পরবর্তীতে ত্যাগী ও আদর্শীক নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন পাওয়ায় সাংবাদিক রোস্তম মল্লিকের ওপর ক্ষিপ্ত হন ওই এমপি। আর তার জেরেই রোস্তম মল্লিক এই হামলার শিকার হয়েছেন।

এ ঘটনায় আটককৃত ৭ দুর্বৃত্তের এক দুর্বৃত্ত এ রকম একটি স্বীকারোক্তিও নাকি দিয়েছে পুলিশের কাছে। অন্য দিকে সন্ধ্যা ৬ টার সময় কোর্ট বসিয়ে ৩ আসামীকে নাকি জামিনে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করে স্বীয় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের টিম লিডারকে নাকি মাগুরা থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হায় সেলুকাস,কি বিচিত্র এই দেশ!

ঘটনা যদি এমনই হয় তবে মাগুরা জেলায় ওই এমপির রামরাজত্ব কায়েম হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে। সেখানে আইন,আদালত ,প্রশাসন সবাই তার গোলামে পরিণত হয়েছে। যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য কলংক জনক অধ্যায়। সেক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কোন পথই খোলা নেই।

দেশের সাংবাদিক সমাজ এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখেই তাকিয়ে আছেন। এ দিকে সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। এখন মাগুরাবাসী ও দেশের সাংবাদিক সমাজের একটাই দাবী; কলংকজনক এই ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করা হোক। গডফাদারসহ সকল হামলাকারী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক। আর যেন এমন কোন ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটে তার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করুক। সাংবাদিক সমাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক।

 

ফারুক ফয়সাল

সাংবাদিক,কলামিষ্ট,সমাজকর্মী

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অকৃতজ্ঞ মাগুরাবাসী এবং একটি নৃশংস ঘটনা

আপডেট : ০৪:৩২:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

ঈদুল ফিতরের ছুঁটিতে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক,নাট্যকার ও গীতিকার রোস্তম মল্লিক। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে এমন তথ্য দিয়েছে গণমাধ্যম। এ ঘটনায় সারা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক নেমে এসেছে। তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। তারা এ ক্ষেত্রে দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

সিনিয়র সাংবাদিক রোস্তম মল্লিকের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, গত ২৫-০৪-২০২৩ তারিখে সন্ধ্যা ছয়টার সময় পরিবারের সদস্যসহ মাগুরা কলেজ পাড়াস্থ (ফুড ক্যাফে) রেস্তুরায় স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংবাদিকদের ঈদ পূর্নমিলনী অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেন।

অনুষ্ঠান শেষ হলে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নেমে এলে ১০/১৫ সদস্যর একদল সন্ত্রাসী যুবক স্থানীয় ভাষায় (হায়েনা বাহিনী) যাদের বয়স ১৮-২০ বছরের মধ্যে হবে, তারা হকিস্টিক, লোহার রড ও বাঁশের লাঠিসহ আতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা চেষ্টা করে। তাদের এলোপাতাড়ি আঘাতে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। সন্ত্রাসীদের আঘাতে মাথার দুই জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হয় যেখানে সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে এবং ডান পায়ে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে।

এছাড়াও সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে বাম হাত ভেঙ্গে যায়। এ সময় তার স্ত্রী এবং মেয়ে সন্ত্রাসীদের বাঁধা দেতে আসলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে যার ফলে তার ছোট কন্যার বাম হাতের তিনটি আঙুলসহ হাতের উপরের অংশ ভেঙ্গে যায় । তার স্ত্রীর কোমরে গুরুতর জখম হয়।

সন্ত্রাসীদের আঘাতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে মৃত ভেবে তারা কলেজ পাড়ার দিকে চলে যায়। অতঃপর তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্ত রোস্তম মল্লিকের শারীরিক আবস্থার অবনতি দেখা দিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফার্ট করেন। এখন তারা ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন।

এ বিষয়ে মাগুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের সনাক্তঅন্তে সারা রাত অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, কতিপয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা ও তার ভাইদের নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কারণেই তার ওপর এই হামলা করা হয়েছে। এঘটনার সাথে স্থানীয় আরো কিছু কুচক্রি লোক জড়িত আছেন।

সাহসী সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক ৩ দশক ধরে নির্ভিক কলম চালাচ্ছেন। এরশাদ সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও তিনি দেশ ও জাতির সকল সংকট ও রাষ্ট্রের অনিয়ম -দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় এক কলম যোদ্ধা। তার লেখা সংবাদগুলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের ভীত নড়িয়ে দেয়। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মনে আতংক সৃষ্টি করে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুসখোর সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঘুম হারাম করে দেয়। ক্ষমতাসীনরাও তটস্থ থাকেন তার লিখনির ভয়ে।

তিনি ৮০‘র দশক থেকে ৯০র দশক পর্যন্ত মাগুরায় সাংবাদিকতা করেছেন। এ সময় জাতীয় পার্টি বিএনপি ও আওয়াম লীগ ক্ষমতায় ছিল। তখনও তিনি মাগুরা জেলার সেরা সাংবাদিক ছিলেন। যা দেখতেন তাই লিখতেন। প্রশাসন বা রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন মহলকে তিনি একটুও ভয় পেতেন না। যেখানে অনিংম-দুর্নীতি সেখানেই তিনি কলম চালাতেন। যেখানেই দলীয় সন্ত্রাস বা লুটপাট সেখানেই তিনি স্বোচ্ছার হতেন। এ কারণে দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা বার বার তাকে হিট করেছে।

বিএনপি সরকার আমলে তাকে সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী কলেজ ক্যাম্পাসে একবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিজ এলাকার কিছু ছাত্রদল নেতার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। সেই আমলেই তিনি সর্বহারা পার্টির সস্ত্রাস,চাদাবাজী,মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়,মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে সংবাদ লিখে জেলার মানুষকে সর্বহারা পার্টির গ্রাসমুক্ত করেন। তখন সর্বহারা পার্টির নেতারা তার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে বার বার হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু মহান আল্লøাহুতায়লা তার সহায় থাকায় তিনি আজো প্রাণে বেঁচে আছেন।

বিএনপি সরকার আমলে তিনি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা প্রকার অনিয়ম -দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রচারের কারণে তার বিরুদ্ধে ৫ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। এমনকি তাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ( ডিটেনশনে) ৪ মাস বিনা বিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়।

এসময় তার ওপর পুলিশ দ্বারা চরম শাররীক নির্যাতনও করা হয়। তখন তার গরীব পিতা বাড়ীর গাছ পালা ও গরু ছাগল বিক্রি করে অর্থ জোগাড় অন্তে মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করে রোস্তম মল্লিককে কারাগার মুক্ত করেন।

তার ক্ষুরধার লেখায় মাগুরা জেলা চরমপন্থিদল সর্বহারাপার্টি মুক্ত হয়। নতুন বাজার এলাকা থেকে পতিতালয় উচ্ছেদ হয়। ঘুস দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। এক কথায় একটি দশকধরে কেবল সাহসী লিখনীর মাধ্যমে তিনি মাগুরা জেলাকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রেখেছিলেন।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকুরী নেন বাংলাদেশের সেরা ক্রাইম ম্যাগাজিন পাক্ষিক অপরাধ জগত পত্রিকায়। এই পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করেই তিনি একটার পর একটা দু:সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। যে কারণে দ্রুত তিনি পেশাগত পদন্নোতি এবং একজন জাদরেল ক্রাইম রিপোর্টারের স্বীকৃতি পান। পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

তার ৩ দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কেবল সাহসী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বার বার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি সরকার আমলেই মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের টার্গেটে পরিণত হয়ে কাটিয়েছেন পলাতক জীবন। একবার তাকে আইসিটি আইনে ৩ টি হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে আটক করা হয়। পুলিশ ও সিআইড রিমান্ডে নিয়ে প্রান সংহারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থেকে অত্যন্ত ধর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। কিন্ত তার সাহসী কলম থেমে যায়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে এসে তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে চাকুরী করেন। দৈনিক মুক্তখবরসহ দৈনিক গণতদন্ত,দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ,দৈনিক নয়াদেশ, দৈনিক খবর বাংলাদেশ ও দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকায় রিপোর্টিং করতে গিয়ে তিনি মাগুরার একটি মাফিয়া গোষ্ঠির চুড়ান্ত টার্গেটে পড়ে যান। এই মাফিয়া গোষ্ঠিটি রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে রোস্তম মল্লিকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্ত সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক ঢাকা থেকে মাগুরায় যাওয়া কমিয়ে দিলে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছিল না। তারা ফাঁদ পেতে বসে ছিল যে, কবে সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক মাগুরা শহরে গমন করেন।

সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক কেবল সাংবাকিতাই করেন না তিনি কবিতা লেখেন,গল্প লেখেন.ছড়া লেখেন,নাটক লেখেন, উপন্যাস লেখেন,গান লেখেন, পত্রিকায় কলাম লেখেন। নাটক পরিচালনা করেন। আবার নিজে অভিনয়ও করেন। এককথায় তিনি বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। দেশে এমন প্রতিভা খুব কমই আছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে এ পর্যন্ত তার ৬খানা কবিতা,গল্প, উপন্যাস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে ১০/১২ টি নাটক প্রচার হয়েছে। এছাড়া তিনি প্রায় ২ হাজার গান লিখেছেন। কিছু গান বড় বড় অডিও কোম্পানী ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে।

এমন একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে কেন হত্যা করার চেষ্টা করা হলো? তার হিসাব মেলাতে পারছেন না মাগুরাবাসী তথা দেশবাসী। তবে মাগুরা জেলার বেশিরভাগ মানূষের অভিমত; সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক মাগুরার একজন সরকার দলীয় এমপি ও তার ভাই, মামা, তার ড্রাইভার, মামাত ভাই এবং তার ভ্যানগার্ডখ্যাত শেখ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি নিয়ে সংবাদ লেখায় কেন্দ্রীয় নেতারা ওই কমিটির অনুমোদন আটকে দেন। পরবর্তীতে ত্যাগী ও আদর্শীক নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন পাওয়ায় সাংবাদিক রোস্তম মল্লিকের ওপর ক্ষিপ্ত হন ওই এমপি। আর তার জেরেই রোস্তম মল্লিক এই হামলার শিকার হয়েছেন।

এ ঘটনায় আটককৃত ৭ দুর্বৃত্তের এক দুর্বৃত্ত এ রকম একটি স্বীকারোক্তিও নাকি দিয়েছে পুলিশের কাছে। অন্য দিকে সন্ধ্যা ৬ টার সময় কোর্ট বসিয়ে ৩ আসামীকে নাকি জামিনে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করে স্বীয় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের টিম লিডারকে নাকি মাগুরা থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হায় সেলুকাস,কি বিচিত্র এই দেশ!

ঘটনা যদি এমনই হয় তবে মাগুরা জেলায় ওই এমপির রামরাজত্ব কায়েম হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে। সেখানে আইন,আদালত ,প্রশাসন সবাই তার গোলামে পরিণত হয়েছে। যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য কলংক জনক অধ্যায়। সেক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কোন পথই খোলা নেই।

দেশের সাংবাদিক সমাজ এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখেই তাকিয়ে আছেন। এ দিকে সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। এখন মাগুরাবাসী ও দেশের সাংবাদিক সমাজের একটাই দাবী; কলংকজনক এই ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করা হোক। গডফাদারসহ সকল হামলাকারী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক। আর যেন এমন কোন ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটে তার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করুক। সাংবাদিক সমাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক।

 

ফারুক ফয়সাল

সাংবাদিক,কলামিষ্ট,সমাজকর্মী