চিকিৎসার অভাবে ভাই-বোনের শিকলবন্দি ১৩ বছর  

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:২৩:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
  • / 147
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের সরকারি গুচ্ছগ্রামে প্রায় ১৩ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন বোন আম্বিয়া (২৪) ও ভাই রুস্তম আলী (২০)। দারিদ্রতার কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই-বোনের চিকিৎসাও করাতে পারছে না পরিবার। আর তারা যাতে কারও অনিষ্ট না করতে পারে এ জন্যই তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, শিকলবন্দি আম্বিয়া ও রুস্তমের বাবা রফিকুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করেন। আর মা রওশন আরা গৃহিনী। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসারে বসবাস করছিলেন কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের সরকারি গুচ্ছগ্রামে। প্রায় ১৩ বছর আগে বড় মেয়ে আম্বিয়ার কিছুটা মানসিক ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা দেয়।

স্বামীর সংসারে গেলে মানসিক ভারসাম্যে ভালো হতে পারে ভেবে তাকে বিয়ে দেয় পরিবার। কিন্তু ৬ মাস পার হতেই জামাই ঘর-সংসার না করে আম্বিয়াকে ছেড়ে দেয়। এরপর তারা নিজেরাই মেয়েকে প্রথম দিকে বগুড়া, রংপুর ও পাবনাতে চিকিৎসা করার পরেও কোনো লাভ হয়নি। ভালো না হওয়ায় টাকার অভাবে অল্প খরচে কবিরাজি চিকিৎসা করানো হয়। এর পাশাপাশি মেঝ ছেলে রুস্তমের মাঝেও একই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় তাকেও কবিরাজিসহ অন্যান্য চিকিৎসা করানো হয়।

বর্তমানে তারা টাকার অভাবে কোনো চিকিৎসা করাতে না পারায় দুই ছেলে-মেয়েকে পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রেখেছে। এমনিতেই অবস্থা ভালো না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মুখে ঠিকমতো অন্য জোগাতে পারেন না বাবা রফিকুল। এরই মধ্যে দুই সন্তানের অবস্থা এমন হওয়ায় চিকিৎসা করতে না পেরে মহাবিপাকে পড়েছেন তারা।

রফিকুল ইসলাম জানান, অনেক টাকা পয়সা চিকিৎসায় ব্যয় করেও দুই ছেলে-মেয়েকে ভালো করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করছি। আমরা গরীব মানুষ। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করতো, তাহলে ছেলে-মেয়ে দুটোর চিকিৎসা করাতে পারতাম।

মা রওশন আরা জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে প্রথমে বড় মেয়ে আম্বিয়ার কিছুটা মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এরপর ছেলেরও একই পরিবর্তন দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসা করেও তারা ভালো হয়নি। তাই তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

আম্বিয়া ও রুস্তমের বোন আদরি বলেন, আমার বড় বোন আর ভাইয়ের অনেকদিন ধরেই এই অসুখ। অনেক ছোট-খাটো কবিরাজ-ডাক্তার দেখানো হয়েছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন বোনের অবস্থা জটিল। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ। তাই সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো বড় বোন আর ভাই সুস্থ হয়ে উঠবে।

প্রতিবেশী রাবেয়া আক্তার ও হাতেম আলীসহ আরও অনেকে বলেন, অনেক বছর ধরে দুই ভাই-বোনের এমন সমস্যা। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। তাদের চিকিৎসা করার সামর্থ নেই। উন্নত চিকিৎসা করা গেলে হয়তো তারা সুস্থ হয়ে উঠবে। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, খবর পেয়ে ওই দুই ভাই-বোনের বাসায় গিয়েছিলাম। তাদের পরিবারের হাতে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করি।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে তাদের চিকিৎসার জন্য আমি পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। হাসপাতালে ভর্তির নিয়মের জন্য তাদের কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তাদের কাগজগুলো জমা দিতে বলা হয়েছে। জমা দিলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চিকিৎসার অভাবে ভাই-বোনের শিকলবন্দি ১৩ বছর  

আপডেট : ১১:২৩:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের সরকারি গুচ্ছগ্রামে প্রায় ১৩ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন বোন আম্বিয়া (২৪) ও ভাই রুস্তম আলী (২০)। দারিদ্রতার কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই-বোনের চিকিৎসাও করাতে পারছে না পরিবার। আর তারা যাতে কারও অনিষ্ট না করতে পারে এ জন্যই তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, শিকলবন্দি আম্বিয়া ও রুস্তমের বাবা রফিকুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করেন। আর মা রওশন আরা গৃহিনী। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসারে বসবাস করছিলেন কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের সরকারি গুচ্ছগ্রামে। প্রায় ১৩ বছর আগে বড় মেয়ে আম্বিয়ার কিছুটা মানসিক ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা দেয়।

স্বামীর সংসারে গেলে মানসিক ভারসাম্যে ভালো হতে পারে ভেবে তাকে বিয়ে দেয় পরিবার। কিন্তু ৬ মাস পার হতেই জামাই ঘর-সংসার না করে আম্বিয়াকে ছেড়ে দেয়। এরপর তারা নিজেরাই মেয়েকে প্রথম দিকে বগুড়া, রংপুর ও পাবনাতে চিকিৎসা করার পরেও কোনো লাভ হয়নি। ভালো না হওয়ায় টাকার অভাবে অল্প খরচে কবিরাজি চিকিৎসা করানো হয়। এর পাশাপাশি মেঝ ছেলে রুস্তমের মাঝেও একই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় তাকেও কবিরাজিসহ অন্যান্য চিকিৎসা করানো হয়।

বর্তমানে তারা টাকার অভাবে কোনো চিকিৎসা করাতে না পারায় দুই ছেলে-মেয়েকে পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রেখেছে। এমনিতেই অবস্থা ভালো না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মুখে ঠিকমতো অন্য জোগাতে পারেন না বাবা রফিকুল। এরই মধ্যে দুই সন্তানের অবস্থা এমন হওয়ায় চিকিৎসা করতে না পেরে মহাবিপাকে পড়েছেন তারা।

রফিকুল ইসলাম জানান, অনেক টাকা পয়সা চিকিৎসায় ব্যয় করেও দুই ছেলে-মেয়েকে ভালো করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করছি। আমরা গরীব মানুষ। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করতো, তাহলে ছেলে-মেয়ে দুটোর চিকিৎসা করাতে পারতাম।

মা রওশন আরা জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে প্রথমে বড় মেয়ে আম্বিয়ার কিছুটা মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এরপর ছেলেরও একই পরিবর্তন দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসা করেও তারা ভালো হয়নি। তাই তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

আম্বিয়া ও রুস্তমের বোন আদরি বলেন, আমার বড় বোন আর ভাইয়ের অনেকদিন ধরেই এই অসুখ। অনেক ছোট-খাটো কবিরাজ-ডাক্তার দেখানো হয়েছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন বোনের অবস্থা জটিল। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ। তাই সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো বড় বোন আর ভাই সুস্থ হয়ে উঠবে।

প্রতিবেশী রাবেয়া আক্তার ও হাতেম আলীসহ আরও অনেকে বলেন, অনেক বছর ধরে দুই ভাই-বোনের এমন সমস্যা। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। তাদের চিকিৎসা করার সামর্থ নেই। উন্নত চিকিৎসা করা গেলে হয়তো তারা সুস্থ হয়ে উঠবে। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, খবর পেয়ে ওই দুই ভাই-বোনের বাসায় গিয়েছিলাম। তাদের পরিবারের হাতে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করি।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে তাদের চিকিৎসার জন্য আমি পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। হাসপাতালে ভর্তির নিয়মের জন্য তাদের কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তাদের কাগজগুলো জমা দিতে বলা হয়েছে। জমা দিলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হবে।