ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রশ্নফাঁসে বুয়েট শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
  • / 134
সরকারি পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার নাম আসার পর এবার উঠে এলো বুয়েটের এক শিক্ষকের নাম।

আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান নিখিল রঞ্জন ধরের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এইউএসটি) গ্রেপ্তার কর্মচারীরা। নিখিল রঞ্জন ধর প্রশ্ন তৈরি থেকে শুরু করে ছাপা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে যুক্ত থাকতেন বলে তারা জানিয়েছে।

আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দেলোয়ার জবানবন্দীতে আরও জানান, আশুলিয়ার প্রেস থেকে কর্মী রবিউল প্রশ্ন নিয়ে তাকে দিতেন। পরে তিনি ওই প্রশ্ন আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী পারভেজ মিয়া ও মোক্তারুজ্জামান রয়েলকে দিতেন। এর বিনিময়ে তারা এক লাখ টাকা করে পেতেন।

দেলোয়ারের আরও বলেন, ‘ বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জনের মাধ্যমেই অল্প টাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ পরীক্ষার টেন্ডারগুলো পেয়েছে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন নিখিল রঞ্জন। এছাড়াও তিনি প্রেস থেকে দুই সেট প্রশ্ন ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন। নিখিল রঞ্জন ধর এ প্রসঙ্গে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করতেন। কাউকে জানালে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকিও দিতেন।’

এব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘একজন আসামি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বুয়েটের এক শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তিনি কীভাবে প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার কী ভূমিকা ছিল। সব খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরো বিষয়টি তদন্তের পর পরিষ্কার বোঝা যাবে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিখিল রঞ্জন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি শুধু সেখানে টেকনিক্যাল সাপের্ট দিতাম। প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। সে (দেলোয়ার) যা বলছে, এটা ঠিক নয়। আমি বুয়েটের শিক্ষক, আমি কেন প্রশ্ন নিয়ে আসব।’

অপর এক প্রশ্নে নিখিল বলেন, ‘ওরা যখন টেকনিক্যাল সাপোর্ট চায়, আমি তখন যাই। সিট ও সেন্টার অ্যারেঞ্জমেন্টটা আমি করে দিই। প্রশ্নের সব কিছু উনারাই করেন। ’

ডিবির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে অনেকের নামই পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না। ’

এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে দেলোয়ার ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহাখালী থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তারর করা হয়। বৃহস্পতিবার তিনজনই ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদেও তারা অপরাধ স্বীকার করেছেন। তিনজন। এ সময় তারা ছয় বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে জানান।

তিন আসামির জবানবন্দিতে কাজী শরীফুল নামে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং দেলোয়ারের ভগ্নিপতি মুবিন উদ্দিনের সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় ডিবির একাধিক সূত্র।

ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশ্নফাঁস চক্রে যাদের নাম আসছে তাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। কারা কীভাবে প্রশ্নফাঁস করতেন, নেপথ্যে কারা ছিলেন, কাদের গাফিলতিতে এসব হতো এবং কারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন– সবাই তদন্তের আওতায় আনা হবে। তদন্তে ‘রাঘববোয়াল’ হিসেবে কারও নাম এলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

প্রশ্নফাঁসে বুয়েট শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ

আপডেট : ১১:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
সরকারি পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার নাম আসার পর এবার উঠে এলো বুয়েটের এক শিক্ষকের নাম।

আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান নিখিল রঞ্জন ধরের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এইউএসটি) গ্রেপ্তার কর্মচারীরা। নিখিল রঞ্জন ধর প্রশ্ন তৈরি থেকে শুরু করে ছাপা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে যুক্ত থাকতেন বলে তারা জানিয়েছে।

আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দেলোয়ার জবানবন্দীতে আরও জানান, আশুলিয়ার প্রেস থেকে কর্মী রবিউল প্রশ্ন নিয়ে তাকে দিতেন। পরে তিনি ওই প্রশ্ন আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী পারভেজ মিয়া ও মোক্তারুজ্জামান রয়েলকে দিতেন। এর বিনিময়ে তারা এক লাখ টাকা করে পেতেন।

দেলোয়ারের আরও বলেন, ‘ বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জনের মাধ্যমেই অল্প টাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ পরীক্ষার টেন্ডারগুলো পেয়েছে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন নিখিল রঞ্জন। এছাড়াও তিনি প্রেস থেকে দুই সেট প্রশ্ন ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন। নিখিল রঞ্জন ধর এ প্রসঙ্গে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করতেন। কাউকে জানালে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকিও দিতেন।’

এব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘একজন আসামি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বুয়েটের এক শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তিনি কীভাবে প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার কী ভূমিকা ছিল। সব খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরো বিষয়টি তদন্তের পর পরিষ্কার বোঝা যাবে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিখিল রঞ্জন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি শুধু সেখানে টেকনিক্যাল সাপের্ট দিতাম। প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। সে (দেলোয়ার) যা বলছে, এটা ঠিক নয়। আমি বুয়েটের শিক্ষক, আমি কেন প্রশ্ন নিয়ে আসব।’

অপর এক প্রশ্নে নিখিল বলেন, ‘ওরা যখন টেকনিক্যাল সাপোর্ট চায়, আমি তখন যাই। সিট ও সেন্টার অ্যারেঞ্জমেন্টটা আমি করে দিই। প্রশ্নের সব কিছু উনারাই করেন। ’

ডিবির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে অনেকের নামই পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না। ’

এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে দেলোয়ার ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহাখালী থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তারর করা হয়। বৃহস্পতিবার তিনজনই ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদেও তারা অপরাধ স্বীকার করেছেন। তিনজন। এ সময় তারা ছয় বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে জানান।

তিন আসামির জবানবন্দিতে কাজী শরীফুল নামে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা এবং দেলোয়ারের ভগ্নিপতি মুবিন উদ্দিনের সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় ডিবির একাধিক সূত্র।

ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশ্নফাঁস চক্রে যাদের নাম আসছে তাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। কারা কীভাবে প্রশ্নফাঁস করতেন, নেপথ্যে কারা ছিলেন, কাদের গাফিলতিতে এসব হতো এবং কারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন– সবাই তদন্তের আওতায় আনা হবে। তদন্তে ‘রাঘববোয়াল’ হিসেবে কারও নাম এলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।