ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যবসায়ীকে হত্যার পর তাবলিগে চলে যান জাকির

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:০০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১
  • / 130
কিশোরগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব বলছে, পাঁচ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন জাকির হোসেন। ওই এলাকার গরুর খামার ব্যাবসায়ী রমিজ উদ্দীন একজন বিত্তশালী। রমিজের অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন মুয়াজ্জিন জাকির। এরপর গরু কিনে দেয়ার কথা বলে মনোহরদী থেকে রমিজকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যান জাকির। সেখানে রমিজকে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর জাকির কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে যান। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় তাবলিগ জামায়াতে আত্মগোপনে থাকেন। সর্বশেষ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন এবং সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় আত্মগোপনে থাকার সময় মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর পরিচালক কমান্ডর খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া এলাকায় খুন হন গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দীন। এ ঘটনায় রমিজ উদ্দিনের ছেলে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এঘটনার পর র‌্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার প্রায় দুই মাস ২০ দিন পর ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। নিহতের রক্তমাখা পোশাকও উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত রমিজ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, নিহত রমিজ উদ্দিন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালেয়েশিয়ায় ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি গরু কেনাবেচার ব্যবসা করে আসছিলেন। তার গরুর খামারও রয়েছে। এলাকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন জাকির হোসেন। সেই হিসেবে রমিজের সঙ্গে পরিচয় হয় জাকিরের। মুয়াজ্জিন জাকির জানতেন রমিজ উদ্দীন অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক। এই টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য রমিজ উদ্দীনকে তিনি জানান, তাদের এলাকায় কম দামে গরু পাওয়া যায়। সেখান থেকে গরু কিনে ব্যবসা করলে রমিজ উদ্দীন আরও লাভবান হবেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মুয়াজ্জিনে জাকির হোসেন জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে রমিজ উদ্দীন ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা তোলেন। গত ২ অক্টোবর রাতে রমিজকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরে বড়পুল এলাকায় যান জাকির। সেখান থেকে রিকশায় কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় গিয়ে তারা নির্জন এলাকায় অবস্থান নেন।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, মোয়াজ্জিন জাকির গাড়িতে করে সেখানে গরু নিয়ে আসবেন বলে রমিজকে জানান। তারা সেখানে অনেক সময় অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর রাত প্রায় দেড়টার দিকে রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ডাউরিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশের কলাবাগানে নিয়ে যান মোয়াজ্জিন জাকির। সেখানে নিয়ে রমিজের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন জাকির। এতে রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপাল, মুখ, বাম চোখের ওপর-নিচে ও মাথার বিভিন্ন স্থানে আরও আঘাত করেন জাকির। পরে রমিজকে মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে ছয় লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর মুয়াজ্জিন প্রথমে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে যান। এরপর নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেন, নামাজেও অংশগ্রহণ করেন। এরপর মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে আরবি পড়ান তিনি। তখনও এলাকায় রমিজ উদ্দীনের মৃত্যুর খবর কেউ জানতে পারেননি। মুয়াজ্জিন তার সাধারণ রুটিন অনুযায়ী চলাচল করতে থাকেন।

গ্রেপ্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ৩ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে জাকির হোসেন ভয় পেয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে নরসিংদীর মাধবদী যান। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ ও সিলেট থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ এসে আত্মগোপনে থাকেন। পরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন। সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় আত্মগোপনে থাকেন। সেখান থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ব্যবসায়ীকে হত্যার পর তাবলিগে চলে যান জাকির

আপডেট : ০১:০০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১
কিশোরগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব বলছে, পাঁচ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন জাকির হোসেন। ওই এলাকার গরুর খামার ব্যাবসায়ী রমিজ উদ্দীন একজন বিত্তশালী। রমিজের অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন মুয়াজ্জিন জাকির। এরপর গরু কিনে দেয়ার কথা বলে মনোহরদী থেকে রমিজকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যান জাকির। সেখানে রমিজকে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর জাকির কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে যান। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় তাবলিগ জামায়াতে আত্মগোপনে থাকেন। সর্বশেষ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন এবং সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় আত্মগোপনে থাকার সময় মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর পরিচালক কমান্ডর খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া এলাকায় খুন হন গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দীন। এ ঘটনায় রমিজ উদ্দিনের ছেলে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এঘটনার পর র‌্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার প্রায় দুই মাস ২০ দিন পর ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। নিহতের রক্তমাখা পোশাকও উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত রমিজ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, নিহত রমিজ উদ্দিন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালেয়েশিয়ায় ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি গরু কেনাবেচার ব্যবসা করে আসছিলেন। তার গরুর খামারও রয়েছে। এলাকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন জাকির হোসেন। সেই হিসেবে রমিজের সঙ্গে পরিচয় হয় জাকিরের। মুয়াজ্জিন জাকির জানতেন রমিজ উদ্দীন অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক। এই টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য রমিজ উদ্দীনকে তিনি জানান, তাদের এলাকায় কম দামে গরু পাওয়া যায়। সেখান থেকে গরু কিনে ব্যবসা করলে রমিজ উদ্দীন আরও লাভবান হবেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মুয়াজ্জিনে জাকির হোসেন জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে রমিজ উদ্দীন ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা তোলেন। গত ২ অক্টোবর রাতে রমিজকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরে বড়পুল এলাকায় যান জাকির। সেখান থেকে রিকশায় কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় গিয়ে তারা নির্জন এলাকায় অবস্থান নেন।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, মোয়াজ্জিন জাকির গাড়িতে করে সেখানে গরু নিয়ে আসবেন বলে রমিজকে জানান। তারা সেখানে অনেক সময় অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর রাত প্রায় দেড়টার দিকে রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ডাউরিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশের কলাবাগানে নিয়ে যান মোয়াজ্জিন জাকির। সেখানে নিয়ে রমিজের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন জাকির। এতে রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপাল, মুখ, বাম চোখের ওপর-নিচে ও মাথার বিভিন্ন স্থানে আরও আঘাত করেন জাকির। পরে রমিজকে মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে ছয় লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর মুয়াজ্জিন প্রথমে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে যান। এরপর নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেন, নামাজেও অংশগ্রহণ করেন। এরপর মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে আরবি পড়ান তিনি। তখনও এলাকায় রমিজ উদ্দীনের মৃত্যুর খবর কেউ জানতে পারেননি। মুয়াজ্জিন তার সাধারণ রুটিন অনুযায়ী চলাচল করতে থাকেন।

গ্রেপ্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ৩ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে জাকির হোসেন ভয় পেয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে নরসিংদীর মাধবদী যান। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ ও সিলেট থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ এসে আত্মগোপনে থাকেন। পরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন। সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় আত্মগোপনে থাকেন। সেখান থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।