ঢাকা ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হামলার পর কবরস্থান-পুকুরপাড়ে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৬:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 142
হামলার পর স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ায় নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় এ ঘটনায় নেতৃত্ব প্রদানকারী কায়েসসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ সন্ত্রাসী।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে জমির দালাল, নিরাপত্তাকর্মী,গাড়ি চালক, রাজমিস্ত্রী, সিএনজি চালক, ফুল বিক্রেতা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালানোর আগে তারা এক হয়। পরে হামলা সহিংসতা চালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। মূলহোতা কায়েস বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করতেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কায়েস জানান, তিনি বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করতেন। অস্ত্র সংগ্রহ করে তার বিশ্বস্ত সদস্যদেরকে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব দিতেন। তারা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহিংসতায় অস্ত্র সরবরাহ করতেন। কাজ শেষ হলে অস্ত্র ফেরত দিলে তারা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে সেসব অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন কায়েস।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও ঢাকা মহানগরীর তেজকুনীপাড়া থেকে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

মো. কায়েসসহ গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- নাসির উদ্দিন, মো. জসিম, মো. মিন্টু, মো. মোরশেদ, কোরবান আলী, মো. ইসমাঈল ও মো. নুরুল আবছার।

এসময় সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে উদ্ধার করা হয় সহিংসতায় ব্যবহৃত ৩টি একনলা বন্দুক, ১টি দোনলা বন্দুক, ১টি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২ রাউন্ড গোলাবারুদ।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে সহিংসতায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও নাশকতা চালায়। উক্ত হামলায় নিহত হন ২ জন ও আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক। এই সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার কারণে গণমাধ্যমসমূহ সহিংসতার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আসছেন। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন বলে জানা যায়।

সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরো শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। সহিংসতা পরবর্তীতে সে ঢাকায় আত্মগোপন করে।

উক্ত নির্বাচনের সহিংসতায় সাতকানিয়া থানায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কায়েস। এর আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা হয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নাসির একটি কোম্পানির চট্রগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। সে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছিল। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহাবাগে ফুল বিক্রি করতেন। সে নির্বাচনের সহিংসতায় সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব প্রদান করেছে বলে জানা যায়। সহিংসতাকালে নাসিরকে মেরুন রংয়ের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙয়ের মাস্ক পরিহিত অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সে বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে।

এছাড়াও র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ডভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যখন সাতকানিয়ায় কোকোনো সহিংসতার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন সে এলাকায় চলে আসে। সে নির্বাচনের আগে ঢাকা থেকে সাতকানিয়াতে আসে এবং কায়েসের নির্দেশে সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে সহিংসতাকালীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব প্রদান করে। পরবর্তীতে সে ঢাকায় চলে আসে ও আত্মগোপন করে। সে কায়েসকেও আত্মগোপনে থাকতে সহায়তা করে। আবছারকে ঢাকার তেজকুনী পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মোরশেদকে জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পারে, কায়েসের গ্রুপের একজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য মোরশেদ। তিনি পেশায় একজন সিএনজি চালক। তাকে ঘটনার দিনে একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা যায়। সহিংসতার পর তিনি সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকে। আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা হয়েছে।

আর গ্রেপ্তার জসিম খাগরিয়ার বাসিন্দা ও পেশায় রাজমিস্ত্রী। চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে অংশ নেন তিনি। সহিংসতাকালীন একটি ছবিতে লাল জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তাকে কার্তুজ/এ্যামোনিশনের একটি বস্তাসহ গ্রেপ্তার মোরশেদের পাশে দেখা যায়। সহিংসতার পর তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীতে আত্মগোপন করে।

গ্রেপ্তার মিন্টু পেশায় গাড়ি চালক। তিনি গত ১৩-১৪ বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে আসছে। কায়েসের নির্দেশে তিনি সহিংসতার উদ্দেশ্যে বাইরে থেকে অস্ত্র পরিবহণ করে। এছাড়াও তার তত্ত্বাবধানে সহিংসতার উদ্দেশ্যে ৩০-৩৫ জন বহিরাগতকে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়। সহিংসতাকালীন তাকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।

গ্রেপ্তার কোরবান আলী পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি উক্ত সহিংসতাকারীদের লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে সহিংসতায় প্রতক্ষ্যভাবে অংশ নেন। সহিংসতার পরবর্তীতে তিনি সাতকানিয়াতেই আত্মগোপনে থাকে। তার বাসা থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন।

গ্রেপ্তার ইসমাঈল পেশায় একজন জমির দালাল। আগে রংপুর থেকে তামাক সংগ্রহ করে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন তিনি। তিনি সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। সহিংসতার পরবর্তীতে তিনিও সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হামলার পর কবরস্থান-পুকুরপাড়ে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তারা

আপডেট : ০৬:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
হামলার পর স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ায় নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় এ ঘটনায় নেতৃত্ব প্রদানকারী কায়েসসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ সন্ত্রাসী।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে জমির দালাল, নিরাপত্তাকর্মী,গাড়ি চালক, রাজমিস্ত্রী, সিএনজি চালক, ফুল বিক্রেতা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালানোর আগে তারা এক হয়। পরে হামলা সহিংসতা চালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। মূলহোতা কায়েস বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করতেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কায়েস জানান, তিনি বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করতেন। অস্ত্র সংগ্রহ করে তার বিশ্বস্ত সদস্যদেরকে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব দিতেন। তারা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহিংসতায় অস্ত্র সরবরাহ করতেন। কাজ শেষ হলে অস্ত্র ফেরত দিলে তারা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে সেসব অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন কায়েস।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও ঢাকা মহানগরীর তেজকুনীপাড়া থেকে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

মো. কায়েসসহ গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- নাসির উদ্দিন, মো. জসিম, মো. মিন্টু, মো. মোরশেদ, কোরবান আলী, মো. ইসমাঈল ও মো. নুরুল আবছার।

এসময় সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে উদ্ধার করা হয় সহিংসতায় ব্যবহৃত ৩টি একনলা বন্দুক, ১টি দোনলা বন্দুক, ১টি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২ রাউন্ড গোলাবারুদ।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে সহিংসতায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও নাশকতা চালায়। উক্ত হামলায় নিহত হন ২ জন ও আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক। এই সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার কারণে গণমাধ্যমসমূহ সহিংসতার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আসছেন। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন বলে জানা যায়।

সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরো শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। সহিংসতা পরবর্তীতে সে ঢাকায় আত্মগোপন করে।

উক্ত নির্বাচনের সহিংসতায় সাতকানিয়া থানায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কায়েস। এর আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা হয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নাসির একটি কোম্পানির চট্রগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। সে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছিল। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহাবাগে ফুল বিক্রি করতেন। সে নির্বাচনের সহিংসতায় সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব প্রদান করেছে বলে জানা যায়। সহিংসতাকালে নাসিরকে মেরুন রংয়ের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙয়ের মাস্ক পরিহিত অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সে বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে।

এছাড়াও র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ডভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যখন সাতকানিয়ায় কোকোনো সহিংসতার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন সে এলাকায় চলে আসে। সে নির্বাচনের আগে ঢাকা থেকে সাতকানিয়াতে আসে এবং কায়েসের নির্দেশে সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে সহিংসতাকালীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব প্রদান করে। পরবর্তীতে সে ঢাকায় চলে আসে ও আত্মগোপন করে। সে কায়েসকেও আত্মগোপনে থাকতে সহায়তা করে। আবছারকে ঢাকার তেজকুনী পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মোরশেদকে জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পারে, কায়েসের গ্রুপের একজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য মোরশেদ। তিনি পেশায় একজন সিএনজি চালক। তাকে ঘটনার দিনে একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা যায়। সহিংসতার পর তিনি সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকে। আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা হয়েছে।

আর গ্রেপ্তার জসিম খাগরিয়ার বাসিন্দা ও পেশায় রাজমিস্ত্রী। চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে অংশ নেন তিনি। সহিংসতাকালীন একটি ছবিতে লাল জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তাকে কার্তুজ/এ্যামোনিশনের একটি বস্তাসহ গ্রেপ্তার মোরশেদের পাশে দেখা যায়। সহিংসতার পর তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীতে আত্মগোপন করে।

গ্রেপ্তার মিন্টু পেশায় গাড়ি চালক। তিনি গত ১৩-১৪ বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে আসছে। কায়েসের নির্দেশে তিনি সহিংসতার উদ্দেশ্যে বাইরে থেকে অস্ত্র পরিবহণ করে। এছাড়াও তার তত্ত্বাবধানে সহিংসতার উদ্দেশ্যে ৩০-৩৫ জন বহিরাগতকে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়। সহিংসতাকালীন তাকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।

গ্রেপ্তার কোরবান আলী পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি উক্ত সহিংসতাকারীদের লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে সহিংসতায় প্রতক্ষ্যভাবে অংশ নেন। সহিংসতার পরবর্তীতে তিনি সাতকানিয়াতেই আত্মগোপনে থাকে। তার বাসা থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন।

গ্রেপ্তার ইসমাঈল পেশায় একজন জমির দালাল। আগে রংপুর থেকে তামাক সংগ্রহ করে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন তিনি। তিনি সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। সহিংসতার পরবর্তীতে তিনিও সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকেন।