প্রেমিকার হবু স্বামীকে খুন, আত্মহত্যা প্রমাণের চেষ্টা
- আপডেট : ০৮:০১:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / 150
পরে ওই হত্যাকে আত্মহত্যা প্রমাণ করতে মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে দেয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। এরপর ভিকটিম শাহাদাতের মা ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ হত্যার শিকার শাহাদাতের বন্ধু অন্য জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। হত্যাকারী জাহিদ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়৷ তবে শেষ রক্ষা হয়নি। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মূল অভিযুক্ত জাহিদসহ ৩ জন।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ধামরাই ও আশুলিয়া থানার আমরাইল এলাকা থেকে জাহিদুল ইসলাম ওরেফ জাহিদ (২২), আবু তাহের (২৪) ও সবুজ হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০২১ সালের ১ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত নামে যুবক কালিয়াকৈরে তার কর্মস্থলে যাওয়ার পরে ৪ আগস্ট থেকে বাড়ির সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় গত ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পরিবার।
তিনি বলেন, ওই বছরের ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ঢাকার ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়।
অন্যদিকে গত ১২ আগস্ট ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায় ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। এরপর ভিকটিম শাহাদাতের মা ২৩ সেপ্টেম্বর বাদি হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী না দেয়ায় রিমান্ড শেষে তাকে জেলে পাঠানো হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ভিকটিম শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। ভিকটিম কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট আসামি জাহিদের প্রেমিকার সাথে শাহাদাতের বিয়ের দিন ঠিক করা ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিয়ে জাহিদ মেনে নিতে না পারায় জাহিদ সহযোগীদের সাথে পরিকল্পনা করে শাহাদাতকে হত্যা করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভিকটিম ও আসামিরা সবাই ধামরাই থানার মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসরও বসাতো।
৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের কাছে মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। এক পর্যায়ে আসামিরা তাকে জুয়া খেলার কথা বলে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ভুক্তভোগীকে নানাভাবে ভুলিয়ে দুই দিন রাখা হয়।
র্যাব জানায়, ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে ভুক্তভোগীকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসে। সেখান থেকে আশুলিয়া থানার একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চর-থাপ্পড় মারে এবং গোপনাঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারে। এরপর লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আসামিরা শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানে করে ধামরাই থানার আমরাইল পুকুরিয়া এলাকার মনুমিয়ার বাগানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। যাতে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়।