ঢাকা ০১:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিপু হত্যা দেশে হলেও নিয়ন্ত্রণ দুবাইতে, কন্টাক্ট ১৫ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৪:৩৫:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২
  • / 167
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘঠিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যায়। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংগঠনের চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়। দেশ থেকে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাত। এই হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়।

শুক্রবার র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে মুগদা, শাহজাহানপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক (৫২) পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত, (২) আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮) মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮), এবং মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশদের (৫১) গ্রেপ্তার করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা এবং বিশেষ করে একজন কলেজ ছাত্রীর নিহত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং মিডিয়াতে গুরুত্বের সাথে সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

অভিযানের সময় উদ্ধার করা হয় নজরদারীর কাজে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল এবং হত্যার কাজে প্রদান যোগ্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইলসহ অন্যান্য সামগ্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিম ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলমান রয়েছে।

র‍্যাব জানায়, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড এর সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। মিল্কী হত্যাকাণ্ডের ৩ বছরের ভিতর একই এলাকার বাসিন্দা রিজভি হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

গ্রেপ্তাররা জানায়, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের সাথে টিপুর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক, পলাশসহ একটি পক্ষ মানববদ্ধন, আলোচনা সভা, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া বাদীর মাধ্যমে চার্জশিটের নারাজী প্রদানের মাধ্যমে চেষ্টা চালায়। এতে জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।

পরবর্তীতে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক ও অন্যান্য সহযোগীরা স্বার্থগত দ্বন্দের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে। বর্তমানে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার কার্য শুরু হয়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব মুখপাত্র জানায়, তাদের ধারণা প্রতিপক্ষ টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ড মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালামের সাথে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা করে। এছাড়াও জাহিদুল ইসলাম টিপুর কারণে কালাম মিমাংসায় আসেনি বলে গ্রেপ্তাররা জানায়। জাহিদুল ইসলাম টিপু কালামকে নিয়ে সার্বক্ষণিক চলাচল করতে থাকে। তারা এক পর্যায়ে কালামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে, কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সাথে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এরপর তারা যখন দেখল কালামের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে যায় তখন তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা বাদী কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না। এরই প্রেক্ষিতে প্রায় ৩ মাস আগে সাক্ষ্য শেষে আদালত চত্ত্বর এলাকায় হত্যাকান্ডের সংগঠণের প্রাথমিক আলোচনা করে।

র‍্যব কর্মকর্তা মঈন জানান, গ্রেপ্তাররা আরও জানায়, রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য দেয়া বিরত থাকতে বলে। গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম রাজী থাকা সত্বেও জাহিদুল ইসলাম টিপুর চাপে সে সাক্ষ্য দেয়। মোরশেদুল আলম পরবর্তীতে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের গ্রেপ্তার আসামীদের সাথে যুক্ত হয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডার ওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যায়। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের চুড়ান্ত সমন্বয় করা হয়।

গ্রেপ্তার আরও জানায়, হত্যাকাণ্ড দেশে সংঘঠিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশ থেকে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাত।

র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তার কিলার নাছির আনুমানিক ৪বার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরবর্তীতে জাহিদুল ইসলাম টিপুর গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে সে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। অবস্থান সম্পর্কে জানানোর ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১০ টায় আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর তত্ত্বাবধানে কিলার কর্তৃক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে গ্রেপ্তাররা জানায়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তার ওমর ফারুকের সাথে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। উক্ত ১৫ লাখ টাকা রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের আসামীদের আসামীদের মধ্যে ওমর ফারুক ৯ লাখ, অবশিষ্ট অর্থ কিলার নাছির, আবু শুটার সালেহ এবং মুসা দেয়। দুবাইয়ে যাওয়ার সময় মুসা ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় এবং হুন্ডির মাধ্যমে মুসাকে আরও ৪ লাখ টাকা পাঠায়। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়। এছাড়াও মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশীটভূক্ত ৩নং আসামী।

খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ওমর ফারুক টিপু হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও হত্যাকান্ড সংগঠনের জন্য তত্ত্বাবধান ও অর্থ লেনদেন করে। ওমর ফারুক ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকান্ডের চার্জশীটভূক্ত ৪নং আসামী এবং উক্ত মামলায় সে আগে কারাভোগ করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার কিলার নাছির এই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের সময় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারী ও হত্যাকাণ্ডের জন্য অর্থ দিয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছে তাকে সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও কেডস্/জুতা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ঘটনা পরবর্তীতে সে তার মোবাইল ফ্লাশ করে বিক্রি করে দেয় ও সীমকার্ড ভেঙ্গে ফেলে। র‌্যাব পরবর্তীতে উক্ত মোবাইলফোন ও সীমকার্ড উদ্ধার করে। এছাড়া ঘটনার আগেরদিন সে সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম এলাকায় একদিন অবস্থান করেছিল। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ১ নং চার্জশীটভূক্ত আসামী। তার নামে অস্ত্র আইনে পল্লবী থানায় আরও ১ টি মামলা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারী ও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে সমন্বয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। আগেও সে মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলায় কারাভোগ করেছে।

গ্রেপ্তার আবু সালেহ শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ প্রদানের সাথে জড়িত। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ২ নং চার্জশীটভুক্ত আসামী। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলেও জানান র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টিপু হত্যা দেশে হলেও নিয়ন্ত্রণ দুবাইতে, কন্টাক্ট ১৫ লাখ টাকা

আপডেট : ০৪:৩৫:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘঠিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যায়। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংগঠনের চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়। দেশ থেকে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাত। এই হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়।

শুক্রবার র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে মুগদা, শাহজাহানপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক (৫২) পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত, (২) আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮) মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮), এবং মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশদের (৫১) গ্রেপ্তার করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা এবং বিশেষ করে একজন কলেজ ছাত্রীর নিহত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং মিডিয়াতে গুরুত্বের সাথে সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

অভিযানের সময় উদ্ধার করা হয় নজরদারীর কাজে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল এবং হত্যার কাজে প্রদান যোগ্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইলসহ অন্যান্য সামগ্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিম ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলমান রয়েছে।

র‍্যাব জানায়, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড এর সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। মিল্কী হত্যাকাণ্ডের ৩ বছরের ভিতর একই এলাকার বাসিন্দা রিজভি হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

গ্রেপ্তাররা জানায়, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের সাথে টিপুর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক, পলাশসহ একটি পক্ষ মানববদ্ধন, আলোচনা সভা, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া বাদীর মাধ্যমে চার্জশিটের নারাজী প্রদানের মাধ্যমে চেষ্টা চালায়। এতে জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।

পরবর্তীতে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক ও অন্যান্য সহযোগীরা স্বার্থগত দ্বন্দের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে। বর্তমানে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার কার্য শুরু হয়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব মুখপাত্র জানায়, তাদের ধারণা প্রতিপক্ষ টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ড মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালামের সাথে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা করে। এছাড়াও জাহিদুল ইসলাম টিপুর কারণে কালাম মিমাংসায় আসেনি বলে গ্রেপ্তাররা জানায়। জাহিদুল ইসলাম টিপু কালামকে নিয়ে সার্বক্ষণিক চলাচল করতে থাকে। তারা এক পর্যায়ে কালামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে, কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সাথে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এরপর তারা যখন দেখল কালামের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে যায় তখন তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা বাদী কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না। এরই প্রেক্ষিতে প্রায় ৩ মাস আগে সাক্ষ্য শেষে আদালত চত্ত্বর এলাকায় হত্যাকান্ডের সংগঠণের প্রাথমিক আলোচনা করে।

র‍্যব কর্মকর্তা মঈন জানান, গ্রেপ্তাররা আরও জানায়, রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য দেয়া বিরত থাকতে বলে। গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম রাজী থাকা সত্বেও জাহিদুল ইসলাম টিপুর চাপে সে সাক্ষ্য দেয়। মোরশেদুল আলম পরবর্তীতে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের গ্রেপ্তার আসামীদের সাথে যুক্ত হয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডার ওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যায়। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের চুড়ান্ত সমন্বয় করা হয়।

গ্রেপ্তার আরও জানায়, হত্যাকাণ্ড দেশে সংঘঠিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশ থেকে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাত।

র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তার কিলার নাছির আনুমানিক ৪বার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরবর্তীতে জাহিদুল ইসলাম টিপুর গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে সে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। অবস্থান সম্পর্কে জানানোর ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১০ টায় আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর তত্ত্বাবধানে কিলার কর্তৃক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে গ্রেপ্তাররা জানায়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তার ওমর ফারুকের সাথে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। উক্ত ১৫ লাখ টাকা রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের আসামীদের আসামীদের মধ্যে ওমর ফারুক ৯ লাখ, অবশিষ্ট অর্থ কিলার নাছির, আবু শুটার সালেহ এবং মুসা দেয়। দুবাইয়ে যাওয়ার সময় মুসা ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় এবং হুন্ডির মাধ্যমে মুসাকে আরও ৪ লাখ টাকা পাঠায়। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়। এছাড়াও মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশীটভূক্ত ৩নং আসামী।

খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ওমর ফারুক টিপু হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও হত্যাকান্ড সংগঠনের জন্য তত্ত্বাবধান ও অর্থ লেনদেন করে। ওমর ফারুক ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকান্ডের চার্জশীটভূক্ত ৪নং আসামী এবং উক্ত মামলায় সে আগে কারাভোগ করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার কিলার নাছির এই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের সময় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারী ও হত্যাকাণ্ডের জন্য অর্থ দিয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছে তাকে সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও কেডস্/জুতা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ঘটনা পরবর্তীতে সে তার মোবাইল ফ্লাশ করে বিক্রি করে দেয় ও সীমকার্ড ভেঙ্গে ফেলে। র‌্যাব পরবর্তীতে উক্ত মোবাইলফোন ও সীমকার্ড উদ্ধার করে। এছাড়া ঘটনার আগেরদিন সে সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম এলাকায় একদিন অবস্থান করেছিল। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ১ নং চার্জশীটভূক্ত আসামী। তার নামে অস্ত্র আইনে পল্লবী থানায় আরও ১ টি মামলা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারী ও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে সমন্বয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। আগেও সে মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলায় কারাভোগ করেছে।

গ্রেপ্তার আবু সালেহ শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ প্রদানের সাথে জড়িত। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ২ নং চার্জশীটভুক্ত আসামী। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলেও জানান র‍্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।