ঢাকা ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেসবুক শিশুদের ক্ষতি করে, সমাজে বিভেদ বাড়ায়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 114
মার্কিন সিনেটের একটি কমিটির কাছে দেয়া বক্তব্যে ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেন বলেছেন, ফেসবুক এবং তাদের অ্যাপগুলো শিশুদের ক্ষতি করছে, (সমাজে) বিভেদ বাড়াচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

বিবিসির খবরে বুধবার বলা হয়, ফ্রান্সিস হাউগেন ফেসবুকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন। এখন তিনি এই কোম্পানির নানা গোপনীয় তথ্য তুলে ধরতে শুরু করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে সিনেট কমিটির সামনে শুনানিতে ফেসবুকের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই সাবেক কর্মী। তবে ফেসবুক বলছে, হাউগেন (ফেসবুকের) যে বিভাগগুলো নিয়ে কথা বলছেন, সেসব বিভাগ সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই।

ফেসবুক সম্পর্কে এসব তথ্য এমন সময়ে সামনে এলো, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে এবং এটির ওপর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ফেসবুক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী মাসে তাদের ২৭০ কোটি নিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এ প্রতিষ্ঠানে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রামের মতো পণ্যও ব্যবহার করে।

কিন্তু ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। ফেসবুকে পরিবর্তন দরকার, এই সিদ্ধান্তে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক- উভয় রাজনৈতিক দলের সিনেটররা একমত হয়েছেন।

শুনানির পর এক বিবৃতিতে ফেসবুক বলেছে, হাউগেন যেভাবে অনেক বিষয়ে চরিত্রাঙ্কন করেছেন, তার সঙ্গে তারা একমত নন। তবে তারাও মনে করে, ইন্টারনেটের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন তৈরির সময় এসেছে।

এক বিবৃতিতে ফেসবুক বলছে, ‘ইন্টারনেটের বিধিবিধান সর্বশেষ ঠিক করা হয়েছে ২৫ বছর আগে। যে কাজটা আইন প্রণেতাদের করার কথা, সেই সমাজের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত এ শিল্পের কাছে আশা না করে বরং কংগ্রেসের এখনি ব্যবস্থা নেয়ার সঠিক সময়।’

রোববার সিবিএস নিউজকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে হাউগেন বলেন, সম্প্রতি তিনি ফেসবুকের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

সেসব নথিপত্রের ভিত্তিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, ইন্সটাগ্রামের নিজেদের চালানো গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, এ অ্যাপটি মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

এ বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবারের (সিনেট) শুনানিতে বক্তব্য দিয়েছেন হাউগেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামের কর্তাব্যক্তিরা জানেন যে, কীভাবে এগুলোকে আরও নিরাপদ করা যায়, কিন্তু তারা সেসব পদক্ষেপ নেননি। কারণ তারা জনগণের ভালোর চেয়ে নিজেদের মুনাফার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।’

তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তিনি নিজে ছাড়া সেখানে তাকে জবাবদিহি করার মতো আর কেউ নেই।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা দেখেছি যে, ইন্টারনেট থেকে ফেসবুক কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি না সেটা কীভাবে হয়েছে। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার জন্য হলেও ফেসবুক তাদের বিভক্তি ছড়াতে পারেনি, গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারেনি এবং নারী ও শিশুদের তাদের শরীর নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারেনি।’

তিনি বলছেন, এর একমাত্র সমাধান হতে পারে, কংগ্রেস যদি ফেসবুকের কর্মকাণ্ড তদারকি করে। হাউগেন বলেন, ‘আমাদের এখনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’ ফেসবুক তার এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সপক্ষে বক্তব্য দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফেসবুক শিশুদের ক্ষতি করে, সমাজে বিভেদ বাড়ায়

আপডেট : ০১:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
মার্কিন সিনেটের একটি কমিটির কাছে দেয়া বক্তব্যে ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেন বলেছেন, ফেসবুক এবং তাদের অ্যাপগুলো শিশুদের ক্ষতি করছে, (সমাজে) বিভেদ বাড়াচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

বিবিসির খবরে বুধবার বলা হয়, ফ্রান্সিস হাউগেন ফেসবুকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন। এখন তিনি এই কোম্পানির নানা গোপনীয় তথ্য তুলে ধরতে শুরু করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে সিনেট কমিটির সামনে শুনানিতে ফেসবুকের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই সাবেক কর্মী। তবে ফেসবুক বলছে, হাউগেন (ফেসবুকের) যে বিভাগগুলো নিয়ে কথা বলছেন, সেসব বিভাগ সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই।

ফেসবুক সম্পর্কে এসব তথ্য এমন সময়ে সামনে এলো, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে এবং এটির ওপর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ফেসবুক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী মাসে তাদের ২৭০ কোটি নিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এ প্রতিষ্ঠানে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রামের মতো পণ্যও ব্যবহার করে।

কিন্তু ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। ফেসবুকে পরিবর্তন দরকার, এই সিদ্ধান্তে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক- উভয় রাজনৈতিক দলের সিনেটররা একমত হয়েছেন।

শুনানির পর এক বিবৃতিতে ফেসবুক বলেছে, হাউগেন যেভাবে অনেক বিষয়ে চরিত্রাঙ্কন করেছেন, তার সঙ্গে তারা একমত নন। তবে তারাও মনে করে, ইন্টারনেটের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন তৈরির সময় এসেছে।

এক বিবৃতিতে ফেসবুক বলছে, ‘ইন্টারনেটের বিধিবিধান সর্বশেষ ঠিক করা হয়েছে ২৫ বছর আগে। যে কাজটা আইন প্রণেতাদের করার কথা, সেই সমাজের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত এ শিল্পের কাছে আশা না করে বরং কংগ্রেসের এখনি ব্যবস্থা নেয়ার সঠিক সময়।’

রোববার সিবিএস নিউজকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে হাউগেন বলেন, সম্প্রতি তিনি ফেসবুকের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

সেসব নথিপত্রের ভিত্তিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, ইন্সটাগ্রামের নিজেদের চালানো গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, এ অ্যাপটি মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

এ বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবারের (সিনেট) শুনানিতে বক্তব্য দিয়েছেন হাউগেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামের কর্তাব্যক্তিরা জানেন যে, কীভাবে এগুলোকে আরও নিরাপদ করা যায়, কিন্তু তারা সেসব পদক্ষেপ নেননি। কারণ তারা জনগণের ভালোর চেয়ে নিজেদের মুনাফার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।’

তিনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তিনি নিজে ছাড়া সেখানে তাকে জবাবদিহি করার মতো আর কেউ নেই।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা দেখেছি যে, ইন্টারনেট থেকে ফেসবুক কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি না সেটা কীভাবে হয়েছে। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার জন্য হলেও ফেসবুক তাদের বিভক্তি ছড়াতে পারেনি, গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারেনি এবং নারী ও শিশুদের তাদের শরীর নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারেনি।’

তিনি বলছেন, এর একমাত্র সমাধান হতে পারে, কংগ্রেস যদি ফেসবুকের কর্মকাণ্ড তদারকি করে। হাউগেন বলেন, ‘আমাদের এখনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’ ফেসবুক তার এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সপক্ষে বক্তব্য দিয়েছে।