ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশ-বিচারকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিলো মনিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৬:২৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
  • / 155
ধর্মীয় উগ্রবাদী জিহাদে আহ্বানকারী এবং বিচারকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলার পরিকল্পনাকারী মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

পুলিশ বলছে, প্রবাসে থাকা অবস্থায় ডিজিটাল মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদ বিভিন্ন পোষ্ট ও ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয় মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০)। পরে সে নিজেই ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও উস্কানিমূলক পোষ্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলো। সে ফেসবুকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়। যেমন- সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।

শনিবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন, দেশী-বিদেশী ২টি সিম কার্ড ও ১টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।

রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

গ্রেপ্তারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সিটিটিসি প্রধান জানান, গ্রেপ্তার মনির আব্দুল রাজ্জাক ২০০৭ সালে প্রথমে বাহরাইনে যায় এবং একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে লেবার হিসেবে কাজ করে। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সে ডিজিটাল বিন্যাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপুষ্ট বিভিন্ন পোষ্ট/ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয়। পরে সে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক একটি ধর্মীয় উগ্র মতবাদী সংগঠনে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে পোষ্ট দেয় এবং অন্যদেরকেও এই জিহাদে যোগদানের আহ্বান করে।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ সে বাহরাইন থেকে ২০১৮ সালে দেশে আসে এবং ২ মাস পরে আবার প্রবাসে চলে যায়। প্রবাসে বসে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও উস্কানিমূলক পোষ্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলো।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দে যোগদানের বিষয়ে সকলের দোয়া কামনা করেন যাতে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’-এর এই যুদ্ধে যেন আল্লাহ তাকে কবুল করেন। তার এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিচারক এবং পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় এবং তাদের উপর হামলার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে বাহরাইন থেকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে চলে আসে ধর্মীয় উগ্র জিহাদি মতবাদপুষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগের সন্ধানে গোপনে/ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছিলো।

এছাড়াও সে নিজে বাহরাইনে তার সহকর্মী পাকিস্তানী নাগরিকের পরামর্শে পাকিস্তানী সেজে ফেসবুকে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে যেখানে সে নিজেকে পাকিস্তান উর্দু স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করেছে বলে স্ট্যাটাস দেয় যাতে অন্যরা তার আইডি দেখে তাকে পাকিস্তানী মনে করে এবং সেই আইডিতে সে রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক পোষ্ট দেয়।

মনির আব্দুল রাজ্জাকের দেয়া ভুয়া ফেসবুকে দেয়া বিভিন্ন পোষ্টগুলো

১. ‘গাজওয়াতুল হিন্দ ডাকছে আমায়। জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন। আপনারাও দলে দলে গাজওয়াতুল হিন্দ এর পতাকাতলে আসেন। এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই হবে।’

২. ‘দেশকে কে না ভালোবাসে? দেশের ভাল কে না চায়? এই ভালোবাসার খাতিরে দেশকে ভালোবেসে প্রয়োজনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে, জুলুম হতে দেশ আবার স্বাধীন করতে হবে। তাই আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। আর এই যুদ্ধ শুরু হোক সুষ্ঠু বিচার পরিচালনার জন্য। কয়েকটা বিচারক আর পুলিশ নিধন করলেই আমাদের সোনার বাংলা আবার ফিরে পাবো।’

৩. ‘দেশকে মুক্ত করতে হলে জানোয়ার পুলিশ ও শুকরের বাচ্চা বিচারকদের উপর হামলা করো। দেশ স্বাধীন করো।’

৪. ‘দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকার দলীয় হুজুর গুলাকে আগে ইসলামী ফাউন্ডেশন ছাড়াতে হবে। প্রথমে নিজেদের ভিতরের জিহাদ দরকার। অতঃপর দেশ। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ অপরিহার্য।’

৫. ‘সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও পুলিশের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।’

৬. ‘সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ। বিচারকরা তখন জামিন দেবে। জেল কমে যাবে। দেশ ভালো হবে।’

৭. ‘গাজয়াতুল হিন্দ,ডাকছে আমায়।’

৮. ‘জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন।’

গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পুলিশ-বিচারকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিলো মনিরের

আপডেট : ০৬:২৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
ধর্মীয় উগ্রবাদী জিহাদে আহ্বানকারী এবং বিচারকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলার পরিকল্পনাকারী মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

পুলিশ বলছে, প্রবাসে থাকা অবস্থায় ডিজিটাল মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদ বিভিন্ন পোষ্ট ও ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয় মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০)। পরে সে নিজেই ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও উস্কানিমূলক পোষ্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলো। সে ফেসবুকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়। যেমন- সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।

শনিবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন, দেশী-বিদেশী ২টি সিম কার্ড ও ১টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।

রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

গ্রেপ্তারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সিটিটিসি প্রধান জানান, গ্রেপ্তার মনির আব্দুল রাজ্জাক ২০০৭ সালে প্রথমে বাহরাইনে যায় এবং একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে লেবার হিসেবে কাজ করে। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সে ডিজিটাল বিন্যাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপুষ্ট বিভিন্ন পোষ্ট/ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয়। পরে সে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক একটি ধর্মীয় উগ্র মতবাদী সংগঠনে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে পোষ্ট দেয় এবং অন্যদেরকেও এই জিহাদে যোগদানের আহ্বান করে।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ সে বাহরাইন থেকে ২০১৮ সালে দেশে আসে এবং ২ মাস পরে আবার প্রবাসে চলে যায়। প্রবাসে বসে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও উস্কানিমূলক পোষ্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলো।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দে যোগদানের বিষয়ে সকলের দোয়া কামনা করেন যাতে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’-এর এই যুদ্ধে যেন আল্লাহ তাকে কবুল করেন। তার এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিচারক এবং পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় এবং তাদের উপর হামলার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে বাহরাইন থেকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে চলে আসে ধর্মীয় উগ্র জিহাদি মতবাদপুষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগের সন্ধানে গোপনে/ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছিলো।

এছাড়াও সে নিজে বাহরাইনে তার সহকর্মী পাকিস্তানী নাগরিকের পরামর্শে পাকিস্তানী সেজে ফেসবুকে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে যেখানে সে নিজেকে পাকিস্তান উর্দু স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করেছে বলে স্ট্যাটাস দেয় যাতে অন্যরা তার আইডি দেখে তাকে পাকিস্তানী মনে করে এবং সেই আইডিতে সে রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক পোষ্ট দেয়।

মনির আব্দুল রাজ্জাকের দেয়া ভুয়া ফেসবুকে দেয়া বিভিন্ন পোষ্টগুলো

১. ‘গাজওয়াতুল হিন্দ ডাকছে আমায়। জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন। আপনারাও দলে দলে গাজওয়াতুল হিন্দ এর পতাকাতলে আসেন। এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই হবে।’

২. ‘দেশকে কে না ভালোবাসে? দেশের ভাল কে না চায়? এই ভালোবাসার খাতিরে দেশকে ভালোবেসে প্রয়োজনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে, জুলুম হতে দেশ আবার স্বাধীন করতে হবে। তাই আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। আর এই যুদ্ধ শুরু হোক সুষ্ঠু বিচার পরিচালনার জন্য। কয়েকটা বিচারক আর পুলিশ নিধন করলেই আমাদের সোনার বাংলা আবার ফিরে পাবো।’

৩. ‘দেশকে মুক্ত করতে হলে জানোয়ার পুলিশ ও শুকরের বাচ্চা বিচারকদের উপর হামলা করো। দেশ স্বাধীন করো।’

৪. ‘দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকার দলীয় হুজুর গুলাকে আগে ইসলামী ফাউন্ডেশন ছাড়াতে হবে। প্রথমে নিজেদের ভিতরের জিহাদ দরকার। অতঃপর দেশ। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ অপরিহার্য।’

৫. ‘সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও পুলিশের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।’

৬. ‘সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ। বিচারকরা তখন জামিন দেবে। জেল কমে যাবে। দেশ ভালো হবে।’

৭. ‘গাজয়াতুল হিন্দ,ডাকছে আমায়।’

৮. ‘জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন।’

গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।