ঢাকা ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ ‘নায়ক’ বনে যাওয়া আসিফ আলীর অজানা কাহিনী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:০২:০০ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১ নভেম্বর ২০২১
  • / 100
ব্যর্থতা ও পারফর্মেন্সের ঘাটতির কারণে আসিফ আলীর মত অপমান ও সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে- এমন ক্রিকেটার পাকিস্তানে নেই। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নির্বাচিত হওয়ার পরও চলতি মাসের শুরুতে বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। শুধু জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নয়, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও।

২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে ১৮ মাস বয়সি কন্যা নুর ফাতেমার মৃত্যুর কারণেও ক্যারিয়ার নিয়ে ধুকতে হয়েছে ৩০ বছর বয়সি আসিফকে। তবে সমালোচকদের সমালোচনার জবাব ব্যাটিং-এর মাধ্যমে দিয়েছেন তিনি। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের গ্রুপ-২ এর ম্যাচে ছক্কার পর ছক্কা মেরে নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন আসিফ।

গত শুক্রবার দুবাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৯তম ওভারে পেসার করিম জানাতের বলে চারটি ছয় হাকিয়েছেন আসিফ। এর মাধ্যমে পাকিস্তান দলের ম্যাচ জয়ের নায়ক বনে যান তিনি। এর দুই দিন আগে শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ছয় হাকিয়েছিলেন আসিফ। তন্মধ্যে দুটি ছয় মেরেছেন কিউই পেসার টিম সাউদির বলে। ৫ উইকেটে পাকিস্তানের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আসিফের ইনিংসটি।

এক সময় লোহার কারখানার শ্রমিক আসিফের জীবনকাহিনী শক্তির সঙ্গে লড়াই করা একটি পুরোনো হিন্দি ছবির গল্পকেও হার মানায়। ‘এ যেন একজন স্বর্ণকারের শত আঘাতের বিপরীতে একজন কামারের এক আঘাতের সঙ্গে তুলনীয়’।

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান কোচ মিসবাহ-উল-হক উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন আসিফের সফলতায়। ২০১১ সালে আসিফকে আবিস্কার করা এ পাক তারকা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সে সমালোচকদের ভুল প্রমান করতে পেরেছে এবং তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে; এতে আমি আনন্দিত।’

পাকিস্তানের ন্যাশনাল সুপার এইট টি-২০ টুর্নামেন্টে ফয়সালাবাদের নেতৃত্বে ছিলেন মিসবাহ। সেখানেই তিনি মারকুটে ব্যাটসম্যান আসিফকে দেখে নিজের দলে নিয়ে নেন। টি-২০ টুর্নামেন্টে অভিষেকেই সাফল্য পান আসিফ। তুলে নেন শতক। পরে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে সাফল্য পান আসিফ।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাকে। প্রতিটি ব্যর্থতার পরই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অন্যদের তুলনায় তাকে বেশি সুযোগ দেয়া মিসবাহ।

মিসবাহ বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য ছয় নম্বর পজিশন বেশ কঠিন। এই পজিশনের জন্য আপনাকে একজন আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের দরকার। সুতরাং আসিফ ওই পজিশনে নিজের সামর্থ্যের প্রমান দিতে পারায় আমি দারুন খুশি।’

বেদনাদায়ক যাত্রা: সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম ভক্তদের বলেছিলেন, ‘আসিফ পছন্দের অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং তাদেরকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। টেলিভিশনে ধারভাষ্য দেয়ার সময় আকরাম বলেন, ‘তারা তাকে সিফর্সি, পারচি বলে ডাকলেও আসিফ দেখিয়েছে একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় কিভাবে ভাল করতে পারে।’

ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের প্রয়াত প্রধান কোচ ও অস্ট্রেলিয় কিংবদন্তী ডিন জোন্সও আসিফের দারুন ভক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে পিএসএলের ম্যাচে আসিফ মাত্র ছয় বলে তিনটি ছয় হাকিয়ে ২৬ রান করার পর জোন্স বলেছিলেন, ‘আসিফ হচ্ছে সত্যিকারের মেধাবী’। ম্যাচে ইসলামাবাদ প্রতিপক্ষ পেশোয়ারকে পরাজিত করে। তিনি বলেন, ‘সে একজন দৃঢ়চেতা খেলোয়াড়, যে চোখের পলকে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।’

১৮ মাস বয়সী কন্যাকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন আসিফ আলী।

২০১৯ সালের মার্চে পিএসএলের ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসিফের কন্যা সন্তানের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার খবর পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন জোন্স। তার চিকিৎসার জন্য তহবিলও গঠন করেছিলেন তিনি। দুইমাস পরই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান আসিফের ছোট্ট কন্যাটি।

ওই সময় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন আসিফ। কিন্তু দুই ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র ১৯ করায় তাকে স্কোয়াড থেকে সরিয়ে নেয় পাকিস্তানের নির্বাচকরা।

নিজের চলার পথকে ‘বেদনাদায়ক যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন আসিফ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘এটি ছিল কঠিন একটি যাত্রাপথ। আমি মিসবাহকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আমাকে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তার কাছে আমি চিরকালের জন্য কৃতজ্ঞ।’ সূত্র: বাসস।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হঠাৎ ‘নায়ক’ বনে যাওয়া আসিফ আলীর অজানা কাহিনী

আপডেট : ১২:০২:০০ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১ নভেম্বর ২০২১
ব্যর্থতা ও পারফর্মেন্সের ঘাটতির কারণে আসিফ আলীর মত অপমান ও সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে- এমন ক্রিকেটার পাকিস্তানে নেই। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নির্বাচিত হওয়ার পরও চলতি মাসের শুরুতে বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। শুধু জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নয়, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও।

২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে ১৮ মাস বয়সি কন্যা নুর ফাতেমার মৃত্যুর কারণেও ক্যারিয়ার নিয়ে ধুকতে হয়েছে ৩০ বছর বয়সি আসিফকে। তবে সমালোচকদের সমালোচনার জবাব ব্যাটিং-এর মাধ্যমে দিয়েছেন তিনি। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের গ্রুপ-২ এর ম্যাচে ছক্কার পর ছক্কা মেরে নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন আসিফ।

গত শুক্রবার দুবাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৯তম ওভারে পেসার করিম জানাতের বলে চারটি ছয় হাকিয়েছেন আসিফ। এর মাধ্যমে পাকিস্তান দলের ম্যাচ জয়ের নায়ক বনে যান তিনি। এর দুই দিন আগে শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ছয় হাকিয়েছিলেন আসিফ। তন্মধ্যে দুটি ছয় মেরেছেন কিউই পেসার টিম সাউদির বলে। ৫ উইকেটে পাকিস্তানের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আসিফের ইনিংসটি।

এক সময় লোহার কারখানার শ্রমিক আসিফের জীবনকাহিনী শক্তির সঙ্গে লড়াই করা একটি পুরোনো হিন্দি ছবির গল্পকেও হার মানায়। ‘এ যেন একজন স্বর্ণকারের শত আঘাতের বিপরীতে একজন কামারের এক আঘাতের সঙ্গে তুলনীয়’।

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান কোচ মিসবাহ-উল-হক উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন আসিফের সফলতায়। ২০১১ সালে আসিফকে আবিস্কার করা এ পাক তারকা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সে সমালোচকদের ভুল প্রমান করতে পেরেছে এবং তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে; এতে আমি আনন্দিত।’

পাকিস্তানের ন্যাশনাল সুপার এইট টি-২০ টুর্নামেন্টে ফয়সালাবাদের নেতৃত্বে ছিলেন মিসবাহ। সেখানেই তিনি মারকুটে ব্যাটসম্যান আসিফকে দেখে নিজের দলে নিয়ে নেন। টি-২০ টুর্নামেন্টে অভিষেকেই সাফল্য পান আসিফ। তুলে নেন শতক। পরে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে সাফল্য পান আসিফ।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাকে। প্রতিটি ব্যর্থতার পরই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অন্যদের তুলনায় তাকে বেশি সুযোগ দেয়া মিসবাহ।

মিসবাহ বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য ছয় নম্বর পজিশন বেশ কঠিন। এই পজিশনের জন্য আপনাকে একজন আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের দরকার। সুতরাং আসিফ ওই পজিশনে নিজের সামর্থ্যের প্রমান দিতে পারায় আমি দারুন খুশি।’

বেদনাদায়ক যাত্রা: সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম ভক্তদের বলেছিলেন, ‘আসিফ পছন্দের অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং তাদেরকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। টেলিভিশনে ধারভাষ্য দেয়ার সময় আকরাম বলেন, ‘তারা তাকে সিফর্সি, পারচি বলে ডাকলেও আসিফ দেখিয়েছে একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় কিভাবে ভাল করতে পারে।’

ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের প্রয়াত প্রধান কোচ ও অস্ট্রেলিয় কিংবদন্তী ডিন জোন্সও আসিফের দারুন ভক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে পিএসএলের ম্যাচে আসিফ মাত্র ছয় বলে তিনটি ছয় হাকিয়ে ২৬ রান করার পর জোন্স বলেছিলেন, ‘আসিফ হচ্ছে সত্যিকারের মেধাবী’। ম্যাচে ইসলামাবাদ প্রতিপক্ষ পেশোয়ারকে পরাজিত করে। তিনি বলেন, ‘সে একজন দৃঢ়চেতা খেলোয়াড়, যে চোখের পলকে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।’

১৮ মাস বয়সী কন্যাকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন আসিফ আলী।

২০১৯ সালের মার্চে পিএসএলের ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসিফের কন্যা সন্তানের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার খবর পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন জোন্স। তার চিকিৎসার জন্য তহবিলও গঠন করেছিলেন তিনি। দুইমাস পরই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান আসিফের ছোট্ট কন্যাটি।

ওই সময় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন আসিফ। কিন্তু দুই ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র ১৯ করায় তাকে স্কোয়াড থেকে সরিয়ে নেয় পাকিস্তানের নির্বাচকরা।

নিজের চলার পথকে ‘বেদনাদায়ক যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন আসিফ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘এটি ছিল কঠিন একটি যাত্রাপথ। আমি মিসবাহকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আমাকে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তার কাছে আমি চিরকালের জন্য কৃতজ্ঞ।’ সূত্র: বাসস।