শহীদ মিনারে ড. ইনামুল হকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
- আপডেট : ১২:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
- / 198
গতকাল সোমবার দুপুরে ড. ইনামুল হক ‘হৃদরোগে’ আক্রান্ত হলে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়ার পর বিকেল সাড়ে ৩টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ১২টায় বুয়েট খেলার মাঠে জানাজা শেষে জোহরের পর বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
এসময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসীম কুমার উকিল ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ বেতার-টেলিভশন শিল্পী সংস্থ , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্প্রতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, “ড. ইনামুল হক একাধারে শিক্ষাবিদ, অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, অধিকন্তু তিনি একজন অত্যন্ত সজ্জন মানুষ ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর বুয়েটে শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন, বহু কালজয়ী নাটকের স্রষ্টা তিনি, বহু কালজয়ী নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি একইসঙ্গে চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন। তার মতো এমন একজন গুণী মানুষের হটাৎ প্রস্থান, সত্যিকার অর্থেই এটি জাতির জন্য বেদনার, আমাদের সবার জন্য বেদনার। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো ভাবিনি, হঠাৎ করে তিনি এভাবে চলে যাবেন। কিছুদিন আগেও তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তার সাথে বহু কাজে আমি যুক্ত ছিলাম। তার এই মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, নাট্য অঙ্গন ও সাংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমার মতে এটা তার অকালে চলে যাওয়া।”
ড. ইনামুল হকের মেয়ে হৃদি হক বলেন, ” ড. ইনামুল হক আসলে সবার ছিলেন। ওনার ভাবনায়, চিন্তায়, চেতনায় ছিলেন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ। এর বাইরে কিচ্ছু ছিলো না। তিনি আমাদের সকলের নাট্যগুরু, নাট্যপ্রাণ মানুষ। সারাজীবন নাটক, থিয়েটার, শিল্পচর্চা, সেই গণআন্দোলনের সময় থেকে শেষদিন পর্যন্ত বাবা অনুবাদের কাজ করে গেছেন। যেই ভালোবাসা তিনি মানুষকে দিয়েছিলেন, মানুষও তাকে সেই ভালোবাসা দিচ্ছেন।”
নৌপরিবহন পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ বলেন, “তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছি, সেই জায়গায় তিনি পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন। আজীবন তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ তার স্বপ্ন ছিল। সেজন্য সর্বক্ষেত্রে তিনি আপোসহীন ভূমিকা রেখেছেন। এক প্রকার নীরবেই তিনি চলে গেলেন। এটা আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি, কিন্তু তার যে কর্ম সেটা আমাদের আগামীদিনের পথ দেখাবে।”
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “গভীর শ্রদ্ধা ড. ইনামুল হকের অমর স্মৃতির প্রতি, তার বিদেহী আত্মার প্রতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন গর্বিত শিক্ষার্থী ছিলেন। এরপর বেশ কিছুদিন তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি নিজেকে যেভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিয়োজিত রেখেছেন, একজন অভিনেতা হিসেবে, নাট্য নির্দেশক হিসেবে, এমনকি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবনে তিনি অসাধারণ ভুমিকা রেখেছেন। সে কারণেই ড. ইনামুল হক শুধু একজন অধ্যাপকই হিসেবেই নন, একজন সমাজকর্মী, একজন সমাজ সংস্কারক,একজন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, সেই হিসেবেই তিনি শ্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার এই মৃত্যুতে জাতি একজন বিদগ্ধ সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বকে হারালো, একজন নাট্য অভিনেতা, একজন নাট্য নির্দেশককে হারালো। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হারালো তার একজন প্রাক্তন গর্বিত শিক্ষার্থীকে। তার অসাম্প্রদায়িক এবং উদার চিন্তন এবং দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সেটি নতুন প্রজন্মকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করবে-আজ এই শোকাবহ দিনে সেই প্রত্যাশা রাখছি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “আমাদের দেশ একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই কঠিন সময়ে আমরা হাসতে ভুলে গেছি। ইনামুল হক মানুকে সব সময় আনন্দ দিয়ে থাকতেন। তিনি হাসতে শিখেয়েছেন। তার প্রস্থানে দুঃখের মধ্যে সামান্যটুকু আনন্দ কে দেবে, আমি জানি না। অভিনয় জগত, শিক্ষাজগত সর্বত্র সব মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে তিনি আমাদের কথা বলতে শিখিয়েছেন। আমি অন্তর থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। অনেক দিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”