ঢাকা ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ কোটি টাকা নিয়ে এনজিও উধাও

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০২:১৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 152

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর বাজারে বেস্টওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (বিএমসি এন্টারপ্রাইজ) নামের এক এনজিও’র মালিক লাপাত্তা। প্রায় দু হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন (৪১) ওই এলাকার মাধবপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইয়াকুব মেম্বারের পুত্র। গ্রাহকদের আমানতের সংগ্রহকৃত টাকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার নামে গড়ে তুলেছেন ১০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, গ্রাহকেরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের চাপের মুখে অবস্থা বেগতিক দেখে ৯ অক্টোবর আফজাল হোসেন এলাকা থেকে উধাও হয়। এরপর থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে তালাবদ্ধ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চান্দহর বাজারে মজিবর রহমানের বিল্ডিং ভাড়া করে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটির নিবন্ধন ছাড়াই কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে আফজাল হোসেন ২০১২ ইং সাল থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন।

এরপর এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখ প্রতি মাসিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। আর তা দিয়েই তিনি নিজের মালিকানায় গড়ে তুলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এগুলো হচ্ছে- ঢাকাতে বালাদ মেটাল, সাভারে শেফা হোমিও হল, বালাদ ব্রেকারী, মানিকনগরে বালাদ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, মাধবপুরে ইকরা আধুনিক উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দহরে শেফা ফার্মেসী, বালাদ মুদি ষ্টোর ও গার্মেন্ট ব্যবসায়।

সরেজমিন, গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে চান্দহর বাজারে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ওই এলাকার গ্রাহক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি দেড় বছর আগে লাখ প্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা লাভে বিএমসিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। দু, তিন কিস্তিতে লাভের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস যাবত তিনি লাভ তো দুরের কথা মূল টাকাও পাচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবেও কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। ওই টাকাও নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অনেকেই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত জমা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অপর গ্রাহক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের কষ্টার্জিত প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা রেখেছি।

মালিকের গা- ঢাকা দেয়ার খবর শুনে আমাদের হতাশায় দিন কাটছে। বর্তমানে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এলাকায় ফিরে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এলাকায় ফিরছেন না তিনি। অফিস সংলগ্ন বাড়ির জনৈক হবি মিয়ার কন্যাও ওই প্রতিষ্ঠানে তাদের টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করেন। গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অভিযুক্ত বিএমসি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন গ্রাহকদের আমানতের ৭ কোটি টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনাকালিন ব্যবসায়িক ধসের কারণে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে এখনো ৪ কোটি টাকার উপরে সম্পদ আছে। আমি আস্তে আস্তে গ্রাহকদের আমানতের পুরো টাকা পরিশোধ করে দেব।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন, আমার জানামতে বিএমসিএস নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই এবং আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতিও নেয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

১০ কোটি টাকা নিয়ে এনজিও উধাও

আপডেট : ০২:১৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর বাজারে বেস্টওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (বিএমসি এন্টারপ্রাইজ) নামের এক এনজিও’র মালিক লাপাত্তা। প্রায় দু হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন (৪১) ওই এলাকার মাধবপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইয়াকুব মেম্বারের পুত্র। গ্রাহকদের আমানতের সংগ্রহকৃত টাকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার নামে গড়ে তুলেছেন ১০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, গ্রাহকেরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের চাপের মুখে অবস্থা বেগতিক দেখে ৯ অক্টোবর আফজাল হোসেন এলাকা থেকে উধাও হয়। এরপর থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে তালাবদ্ধ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চান্দহর বাজারে মজিবর রহমানের বিল্ডিং ভাড়া করে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটির নিবন্ধন ছাড়াই কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে আফজাল হোসেন ২০১২ ইং সাল থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন।

এরপর এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখ প্রতি মাসিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। আর তা দিয়েই তিনি নিজের মালিকানায় গড়ে তুলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এগুলো হচ্ছে- ঢাকাতে বালাদ মেটাল, সাভারে শেফা হোমিও হল, বালাদ ব্রেকারী, মানিকনগরে বালাদ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, মাধবপুরে ইকরা আধুনিক উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দহরে শেফা ফার্মেসী, বালাদ মুদি ষ্টোর ও গার্মেন্ট ব্যবসায়।

সরেজমিন, গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে চান্দহর বাজারে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ওই এলাকার গ্রাহক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি দেড় বছর আগে লাখ প্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা লাভে বিএমসিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। দু, তিন কিস্তিতে লাভের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস যাবত তিনি লাভ তো দুরের কথা মূল টাকাও পাচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবেও কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। ওই টাকাও নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অনেকেই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত জমা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অপর গ্রাহক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের কষ্টার্জিত প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা রেখেছি।

মালিকের গা- ঢাকা দেয়ার খবর শুনে আমাদের হতাশায় দিন কাটছে। বর্তমানে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এলাকায় ফিরে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এলাকায় ফিরছেন না তিনি। অফিস সংলগ্ন বাড়ির জনৈক হবি মিয়ার কন্যাও ওই প্রতিষ্ঠানে তাদের টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করেন। গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অভিযুক্ত বিএমসি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন গ্রাহকদের আমানতের ৭ কোটি টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনাকালিন ব্যবসায়িক ধসের কারণে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে এখনো ৪ কোটি টাকার উপরে সম্পদ আছে। আমি আস্তে আস্তে গ্রাহকদের আমানতের পুরো টাকা পরিশোধ করে দেব।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন, আমার জানামতে বিএমসিএস নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই এবং আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতিও নেয়নি।