ঢাকা ০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেমন আছেন আত্রাই হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ

কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ
  • আপডেট : ০৫:০৮:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩
  • / 82

ব্রিটিশ আমলের রেলী ব্রার্দাসের পরিতাক্ত দুটি খুপরি ঘরে বাস করে কয়েকটি পরিবার। জায়গার অভাবে একসঙ্গেও ঘুমাতে পারেন না অনেকে। পালা ক্রমে একেক সময় একেকজনকে ঘুমাতে হয়। ঘরের ভেতর পর্দা করে কক্ষ বানাতে হয়।

আর এই কক্ষে গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসির জীবন, সেখানেই আবার রান্নার চুলা। সব মিলিয়ে এক অসহনীয় জীবন যাপন করছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রেলী ব্রার্দাস বটতলীর হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।তাদের কেউঝাড়ুদার, কেউ পরিচ্ছন্নতাকমী। অন্য সব মানুষের মতো তাদের জীবনেও আছে সুখ-দুঃখ, ব্যাথা-বেদনা, আছে চাওয়া-পাওয়া,প্রতিদিন ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে ঝাড়ু,বেলচা আর ছেচাট ট্রলি হাতে, অথচ উপজেলার হরিজন জনগোষ্ঠীর নারীরা বঞ্চিত শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও আইনি সুবিধা থেকে।

বার‌্যবিবাহ, মাতৃত্বকালীন জটিলতা, মাতৃমৃত্যু,পারিবারিক সহিংসতা, ধষণসহ নানা সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয় তাদেররকে।জন্মের পর থেকে মুখোমুখি হতে হয় নানা বৈষম্যের।

রেলী ব্রার্দাসের বচতলী হরিজন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির সামনে কাপড়ের ছড়াছড়ি। কাপড় দেখলেই বুঝা য়ায়, ওই এলাককায় কতো লোকের বসবাস। গত তিন প্রজন্ম ধরেই একই ঘরে একই সাথে বসবাস করে আসছেন বেটি চম্পা রানী।

তিনি জানান, একটা ঘরে আমাগো থাকতে হয়। এর মধ্যে একটা রুম,গাদাগাদি করে থাকি। এর মধ্যে বড় বড় পোলাপানও আছে।
গৃহিনী এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কধনো এক সাথে ঘুমাতে পারি না। একসাথে ঘুমানোর জায়গা নাই। আমরা মহিলারা রাতে ঘুমাই আর পুরুষরা সকালে ঘুমায়।

ঝাড়ুদার এ প্রতিবেদককে রানী জানান,আমি যখন ঘুমাই আমার ছেলে বইয়া থাকে,আর ছেলে যখন মুগায় আমি বইয়া থাকি। ছোট বাসাা জায়গা পাইনা। কি করবো। আমাগেতো দেখার কেউ নাই। বিএ পড়াশোনা সাধনা রানী চৌধুরী তিনি জানান কাপড়ড় দিয়ে ঘরের মধ্যে ঘর বানাতেত হয় আমাদের। এভাবেই আমরা রাত্রি যাপন করি। ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারি না। এদিকে ঘরে জায়গা না থাকার পরেও জায়গা করে দিতে নয় নববধুকে। এজন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘুমাতে হয় ঘরের বাহিরে।

মাধব বাঁসফোর বলেন, বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি কিছুদিন হলো, কিন্তু রুমতো একটাই। তাই মধ্যে পর্দা করে দেই। না হয় আমি আর আমার বউ মিলে বাইরে শুয়ে থাকি।

রেলী ব্রার্দাসের বটতলী হরিজন কলোনীর সভাপতি সুধির বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে কিছুদিদন আগে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম। তখন আমার মনে হয়েছে আমাদের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে ওই চিড়িয়াখানার জানোয়াররাও ভালোভাবে বসবাস করে। আমাদের এই এলাকা ভেঙ্গে নাকি সরকার বাহাদুর মিনি ষ্টেডিয়াম করা হবে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আর একটা বিষয় হচ্ছে, যদি কখনো এখানে আগুন লাগে, আমরা যে ঘরে থেকে বের হবো এই সুযোগটাও নাই। বাংলাদেশে বতমানে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়নের মতো দলিতদের সংখ্যা। বাঙালি দলিত বলতে সমাজে যারা অস্পৃশ্য তাদের বোঝায়,যেমন কমকার, মালাকার, কামাড়, কুমার, জেলে, পাটনী, কায়পুত্র, কৈবত, ক্ষোরকার মাহাতো রাজবংশী কমকার প্রভূতি। এসব সম্প্রদায় আবার বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত।

এ বিষয়ে উপজেলার আহসান গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মন্হুরুল আলম বলেন, রেলী ব্রার্দাসের বটতলী হরিজন কলোনীতে আবাসনের তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেক বেশি যা তাদের জন্য বসবাসের মতো ঘরবাড়ি নাই। আর সরকার প্রতি উপজেলায় একটি করে মিনি ষ্টেডিয়াম তৈরির প্রস্তাবনা আছে।

যদি হরিজন কলোনীর রেলী ব্রাদারে পরিতাক্ত ওঅবৈধ ভাবে গড়ে উঠা বাড়িঘর উচেছদ করার পর মিনি স্টেডিয়াম করা হয় তবে হরিজন কলোনীর বসবাসকারীদের অন্যস্থানে বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হভে। তবে আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হরিজনদেরর সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কেমন আছেন আত্রাই হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ

আপডেট : ০৫:০৮:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

ব্রিটিশ আমলের রেলী ব্রার্দাসের পরিতাক্ত দুটি খুপরি ঘরে বাস করে কয়েকটি পরিবার। জায়গার অভাবে একসঙ্গেও ঘুমাতে পারেন না অনেকে। পালা ক্রমে একেক সময় একেকজনকে ঘুমাতে হয়। ঘরের ভেতর পর্দা করে কক্ষ বানাতে হয়।

আর এই কক্ষে গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসির জীবন, সেখানেই আবার রান্নার চুলা। সব মিলিয়ে এক অসহনীয় জীবন যাপন করছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রেলী ব্রার্দাস বটতলীর হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।তাদের কেউঝাড়ুদার, কেউ পরিচ্ছন্নতাকমী। অন্য সব মানুষের মতো তাদের জীবনেও আছে সুখ-দুঃখ, ব্যাথা-বেদনা, আছে চাওয়া-পাওয়া,প্রতিদিন ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে ঝাড়ু,বেলচা আর ছেচাট ট্রলি হাতে, অথচ উপজেলার হরিজন জনগোষ্ঠীর নারীরা বঞ্চিত শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও আইনি সুবিধা থেকে।

বার‌্যবিবাহ, মাতৃত্বকালীন জটিলতা, মাতৃমৃত্যু,পারিবারিক সহিংসতা, ধষণসহ নানা সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয় তাদেররকে।জন্মের পর থেকে মুখোমুখি হতে হয় নানা বৈষম্যের।

রেলী ব্রার্দাসের বচতলী হরিজন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির সামনে কাপড়ের ছড়াছড়ি। কাপড় দেখলেই বুঝা য়ায়, ওই এলাককায় কতো লোকের বসবাস। গত তিন প্রজন্ম ধরেই একই ঘরে একই সাথে বসবাস করে আসছেন বেটি চম্পা রানী।

তিনি জানান, একটা ঘরে আমাগো থাকতে হয়। এর মধ্যে একটা রুম,গাদাগাদি করে থাকি। এর মধ্যে বড় বড় পোলাপানও আছে।
গৃহিনী এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কধনো এক সাথে ঘুমাতে পারি না। একসাথে ঘুমানোর জায়গা নাই। আমরা মহিলারা রাতে ঘুমাই আর পুরুষরা সকালে ঘুমায়।

ঝাড়ুদার এ প্রতিবেদককে রানী জানান,আমি যখন ঘুমাই আমার ছেলে বইয়া থাকে,আর ছেলে যখন মুগায় আমি বইয়া থাকি। ছোট বাসাা জায়গা পাইনা। কি করবো। আমাগেতো দেখার কেউ নাই। বিএ পড়াশোনা সাধনা রানী চৌধুরী তিনি জানান কাপড়ড় দিয়ে ঘরের মধ্যে ঘর বানাতেত হয় আমাদের। এভাবেই আমরা রাত্রি যাপন করি। ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারি না। এদিকে ঘরে জায়গা না থাকার পরেও জায়গা করে দিতে নয় নববধুকে। এজন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘুমাতে হয় ঘরের বাহিরে।

মাধব বাঁসফোর বলেন, বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি কিছুদিন হলো, কিন্তু রুমতো একটাই। তাই মধ্যে পর্দা করে দেই। না হয় আমি আর আমার বউ মিলে বাইরে শুয়ে থাকি।

রেলী ব্রার্দাসের বটতলী হরিজন কলোনীর সভাপতি সুধির বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে কিছুদিদন আগে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম। তখন আমার মনে হয়েছে আমাদের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে ওই চিড়িয়াখানার জানোয়াররাও ভালোভাবে বসবাস করে। আমাদের এই এলাকা ভেঙ্গে নাকি সরকার বাহাদুর মিনি ষ্টেডিয়াম করা হবে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আর একটা বিষয় হচ্ছে, যদি কখনো এখানে আগুন লাগে, আমরা যে ঘরে থেকে বের হবো এই সুযোগটাও নাই। বাংলাদেশে বতমানে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়নের মতো দলিতদের সংখ্যা। বাঙালি দলিত বলতে সমাজে যারা অস্পৃশ্য তাদের বোঝায়,যেমন কমকার, মালাকার, কামাড়, কুমার, জেলে, পাটনী, কায়পুত্র, কৈবত, ক্ষোরকার মাহাতো রাজবংশী কমকার প্রভূতি। এসব সম্প্রদায় আবার বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত।

এ বিষয়ে উপজেলার আহসান গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মন্হুরুল আলম বলেন, রেলী ব্রার্দাসের বটতলী হরিজন কলোনীতে আবাসনের তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেক বেশি যা তাদের জন্য বসবাসের মতো ঘরবাড়ি নাই। আর সরকার প্রতি উপজেলায় একটি করে মিনি ষ্টেডিয়াম তৈরির প্রস্তাবনা আছে।

যদি হরিজন কলোনীর রেলী ব্রাদারে পরিতাক্ত ওঅবৈধ ভাবে গড়ে উঠা বাড়িঘর উচেছদ করার পর মিনি স্টেডিয়াম করা হয় তবে হরিজন কলোনীর বসবাসকারীদের অন্যস্থানে বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হভে। তবে আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হরিজনদেরর সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।