মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদেশে আসামিকে ৭ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য সময় দেয়া হয়েছে।

ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রায়হানুর রহমান সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের মৃত ডা. শাহাজাহান আলীর ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামির বড় ভাই শাহীনুর রহমান ৮ বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেন। ছোট ভাই রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে তিনি খাওয়া-দাওয়া করতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুর রহমানকে।

এ অবস্থায় সংসারে টাকা দিতে না পারায় ভাবি দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতেন। এরই জের ধরে গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই শাহীনুর রহমান (৪০), ভাবি সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয়র সাথে বিশেষ চেতনানাশক বড়ি খাওয়ায় রায়হানুল। পরদিন ১৫ অক্টোবর ভোর ৪টার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদের একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারী পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়।

এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শ্বাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে থানায় ১৫ অক্টোবর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখার (সিআইডি) সাতক্ষীরা অফিসের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে শাহীনুরের ভাই রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ২১ অক্টোবর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

তদন্তে ২৮ জনের সাক্ষী ও রায়হানুলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়হানুর রহমানকে একমাত্র আসামি করে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।

গত ১৪ জানুয়ারি আসামি রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৭ জন সাক্ষী ও আসামিপক্ষে একজন সাফাই সাক্ষী দেন। সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামি রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন।

নিহত পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে। এদিকে মামলার রায় শোনার পর রায়হানুলের স্বজনরা আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ রায় চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস ১৬ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আগামিতে কোনো ব্যক্তি যাতে এ ধরণের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সাহস না পায়, মামলার রায়ে তার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. এসএম হায়দার আলী বলেন, এ বিচারে তিনি খুশি হতে পারেননি। মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।