ঢাকা ০২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৬৯ বছর পুরনো ঝরাজীর্ণ শুভপুর সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৩১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 150

এক সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ শুভপুর সেতু এখন ঝীর্ণশীর্ণ। যেকোন মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে এই সেতু। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে নির্মিত ৩৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু ফেনী-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ৬৯ বছর পুরনো ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের ফেনী নদীর উপর অবস্থিত সেতুটি।

সেতুটি ধসে পড়ার আশঙ্কায় ব্রীজের মুখে লোহার পিলার দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার পরও ঝুঁকি নিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঝরাজীর্ণ এই ব্রীজ দিয়ে ভারী যানবাহন বন্ধ থাকায় মিরসরাই-ছাগলনাইয়া উপজেলা ও খাগড়াছড়ি জেলার হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন অর্ধশত কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে অর্থ ও সময় নষ্ট করে বেশিরভাগ যানবাহনকে গন্তব্যে যেতে হয়।

জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী মিরসরাই, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, উত্তর ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় যানবাহনযোগে চলাচলের জন্য শুভপুর সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মুক্তিযুদ্ধের নিরব সাক্ষী হিসেবে একমাত্র মাধ্যম শুভপুর সেতুটি সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তিন জেলায় বসবাসকারী জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ফেনী নদীর ওপর শুভপুর ব্রীজটি স্থাপনের নকশা প্রণয়ন করেছিল। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ ফেনী নদীর ওপর শুভপুর ব্রীজ নির্মাণ করে।

৬৯ বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক হয়ে ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রয়োজনে শুভপুর ব্রীজ দিয়ে সড়ক পথে চট্টগ্রাম বিভাগের যানবাহন চলাচল করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শুভপুর সেতু এলাকায় কয়েক দফায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওই সময় গুলিবর্ষণের আঘাতে সেতুটি বিধ্বস্ত হয়।

স্বাধীণতা যুদ্ধের পর থেকে কয়েক দফায় সেতুটি মেরামত করলেও পুণঃনির্মাণ করা হয়নি। ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ফেনী নদীতে সেতুর পিলারের নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েকটি পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। ইস্পাতের পাতের ওপর নির্মিত এই অঞ্চলের সর্বপ্রথম স্থাপিত সেতুটি ধসে পড়লে বড় ধরণের প্রাণহানি হওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের দুর্বিসহ ভোগান্তি পোহাতে হবে।

মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, শুভপুর সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। সেতুটি পুণরায় নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সেতুটি পুণঃ নির্মিত হলে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি বড় স্বপ্ন পূরণ হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ফেনী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. আহাদ উল্ল্যাহ বলেন, শুভপুর সেতুটি পুণঃ নির্মাণের জন্য ডিজাইন তৈরি ও সয়েল টেস্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, ব্রীজটি চারলেন বিশিষ্ট হবে। সেতুটি নির্মিত হলে ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলায় সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি রামগড়ে নির্মিতব্য স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৬৯ বছর পুরনো ঝরাজীর্ণ শুভপুর সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

আপডেট : ০১:৩১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

এক সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ শুভপুর সেতু এখন ঝীর্ণশীর্ণ। যেকোন মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে এই সেতু। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে নির্মিত ৩৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু ফেনী-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ৬৯ বছর পুরনো ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের ফেনী নদীর উপর অবস্থিত সেতুটি।

সেতুটি ধসে পড়ার আশঙ্কায় ব্রীজের মুখে লোহার পিলার দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার পরও ঝুঁকি নিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঝরাজীর্ণ এই ব্রীজ দিয়ে ভারী যানবাহন বন্ধ থাকায় মিরসরাই-ছাগলনাইয়া উপজেলা ও খাগড়াছড়ি জেলার হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন অর্ধশত কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে অর্থ ও সময় নষ্ট করে বেশিরভাগ যানবাহনকে গন্তব্যে যেতে হয়।

জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী মিরসরাই, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, উত্তর ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় যানবাহনযোগে চলাচলের জন্য শুভপুর সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মুক্তিযুদ্ধের নিরব সাক্ষী হিসেবে একমাত্র মাধ্যম শুভপুর সেতুটি সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তিন জেলায় বসবাসকারী জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ফেনী নদীর ওপর শুভপুর ব্রীজটি স্থাপনের নকশা প্রণয়ন করেছিল। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ ফেনী নদীর ওপর শুভপুর ব্রীজ নির্মাণ করে।

৬৯ বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক হয়ে ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রয়োজনে শুভপুর ব্রীজ দিয়ে সড়ক পথে চট্টগ্রাম বিভাগের যানবাহন চলাচল করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শুভপুর সেতু এলাকায় কয়েক দফায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওই সময় গুলিবর্ষণের আঘাতে সেতুটি বিধ্বস্ত হয়।

স্বাধীণতা যুদ্ধের পর থেকে কয়েক দফায় সেতুটি মেরামত করলেও পুণঃনির্মাণ করা হয়নি। ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ফেনী নদীতে সেতুর পিলারের নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েকটি পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। ইস্পাতের পাতের ওপর নির্মিত এই অঞ্চলের সর্বপ্রথম স্থাপিত সেতুটি ধসে পড়লে বড় ধরণের প্রাণহানি হওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের দুর্বিসহ ভোগান্তি পোহাতে হবে।

মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, শুভপুর সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। সেতুটি পুণরায় নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সেতুটি পুণঃ নির্মিত হলে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি বড় স্বপ্ন পূরণ হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ফেনী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. আহাদ উল্ল্যাহ বলেন, শুভপুর সেতুটি পুণঃ নির্মাণের জন্য ডিজাইন তৈরি ও সয়েল টেস্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, ব্রীজটি চারলেন বিশিষ্ট হবে। সেতুটি নির্মিত হলে ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলায় সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি রামগড়ে নির্মিতব্য স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।